ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম, পিছিয়ে নেই আলু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম, পিছিয়ে নেই আলু

ঢাকা: রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আলুসহ পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম।

উৎপাদন কম, আমদানি বন্ধ ও সরবরাহের ঘাটতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বাড়ছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।

 

তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবগুলো পণ্য পর্যাপ্ত থাকলেও, কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পর এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি রাজধানীর অন্যতম বড় এই পাইকারি ও খুচরা বাজার। ঈদে বাড়ি যাওয়া বিক্রেতারা এখনো ঢাকায় না ফেরায়, সাধারণ সময়ের তুলনায় খোলা দোকানের সংখ্যা নেহায়েত কম। ক্রেতার সংখ্যাও খুব একটা বেশি না।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। ঈদের একদিন আগেও যা বিক্রি হয় ১৪০ টাকায় এবং এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।

দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আলু বিক্রেতা রতন বলেন, গতবারের চেয়ে এবার আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। আর যা উৎপাদন হয়েছে সেটাও স্টোরেজে সংরক্ষণ করার করণে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। তাই দাম বাড়ছে।

এদিকে ঈদের আগে মানভেদে ৩৬-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৬ টাকায়। এক মাস আগে যা বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৪ টাকা দরে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা।  

ঈদের আগে ১০০ টাকা ও এক মাস আগে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।  

অন্যদিকে, ঈদের আগে ১৪০ টাকা ও এক মাস আগে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চায়না রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।

এছাড়া ঈদের আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায়। আর ২৮০ টাকার চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি দরে।

প্রতিনিয়ত এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে, পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সায়েদ বলেন, এই মৌসুমে একদিকে যেমন পেঁয়াজের আবাদ কম হয়েছে, অন্যদিকে মাঝে দুই দিনের বৃষ্টিতে মাঠে থাকা পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। তাই সরবরাহও কম, দামও বেশি।  

কয়দিন পর দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকশ করেন এই ব্যবসায়ী।

আদা-রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে আকাশ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, চাহিদার তুলনায় আমদানি কম। আবার আমদানি খরচও বেশি। তাই দামও বেশি।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, মাত্র দুদিনের বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে- এটা নিতান্তই অযৌক্তিক কথা। ব্যবসায়ীরা সব সময়ই দাম বাড়ানোর অজুহাত খুঁজতে থাকেন। যখন বৃষ্টি হয় না, তখন গরমের অজুহাত দেন। এখন বৃষ্টির অজুহাত দিচ্ছেন।

শরিফুল নামের এক ক্রেতা বলেন, ফসল ভালো হোক বা খারাপ, দাম বাড়বেই। এটা যেন নিত্য ব্যাপার হয়ে গেছে। এ নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ নেই। কারণ বিক্রেতারা যে দামে বিক্রি করবে, আমাদের তো সেই দামেই কিনতে হবে। যারা কথা বলার বা তদারকি করার, তারা ঠিকমতো তাদের কাজ করে না বলেই বাজারে এই অবস্থা।

এদিকে রমজান মাসে কিছুটা কম থাকার পর আবার বেড়েছে মুরগির দাম। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। রমজানে এই মুরগির দাম ২০০ টাকায় নেমে এসেছিল। এছাড়া লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজি দরে।

মুরগির দাম ফের বাড়ার কারণ জানতে চাইলে জিয়াউল হক নামের এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের আগের দিন তো ব্রয়ার ২৮০-৩০০ টাকাও বিক্রি হয়েছে। এখন তো তাও কিছুটা কম আছে। দাম কেন বাড়ছে, তা খামারি আর পাইকারি বিক্রেতারা বলতে পারবেন। আমরা খুচরা ব্যবসায়ী, যে দামে কিনে আনি, সেই দামে বিক্রি করি।

মুরগির দাম বাড়লেও আগের মতোই আছে ডিমের দাম। বর্তমানে প্রতি হালি লাল ডিম ৪৩ টাকা, সাদা ডিম ৪০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাড়েনি চালের দামও। বরং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন চাল উঠলে দাম কিছুটা কমবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।  
বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৮০ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা, পোলাউ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।  

এ বিষয়ে চাল বিক্রিতা শাহজাহান বলেন, চালের দাম আগের মতোই আছে। তবে নতুন চাল উঠতে শুরু করেছে। কারওয়ান বাজারে এখনো নতুন চাল আসেনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আসবে। তখন মিনিকেট ও আটাশের দামও কমবে।

সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, গাজর ৬০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, শসা ৯০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, উস্তা ৫০ টাকা, কাকরোল ৮০-৯০ টাকা, কাঁচা আম ৫০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০-১১০ টাকা, ধুন্দুল ৯০ টাকা, লতি ৫০ টাকা।  

এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

সবজি বিক্রিতা সোহেল বলেন, ঈদের পর এখনো সেভাবে সবজির সরবরাহ শুরু হয়নি। ক্রেতাও কম। তাই সবজির দাম একটু বেশি।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি লইট্টা মাছ ২২০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, শিং ৩০০-৪০০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, বাটা ৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০-৪০০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, পুঁটি ৩০০ টাকা, বাছা মাছ ৬০০ টাকা, টাককিনি ২২০ টাকা, আইড় ৮০০ টাকা, বাইম ৬৫০ টাকা, শোল ৭০০ টাকা, টাকি ৩৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬৫০-৭৫০ টাকা, ইলিশ ১৩০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের এমন বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, দেশি মাছ এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। তাই দেশি মাছের দাম বেশি।  

এদিকে, আগের মতোই ৭৫০ টাকায় গরুর মাংস, ১১০০ টাকায় খাসি ও ১০০০ টাকায় ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে।

মাছ-মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। সালাউদ্দিন নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়ায় বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক কেজির জায়গায় হাফ কেজি কিনতে হচ্ছে। ঈদের আগে ২০০ টাকা করে কেনা ব্রয়লার মুরগি আজ ২৪০ টাকা দিয়ে কিনলাম। ৩৫ টাকার মিষ্টি আলু কিনতে হয়েছে ৬০ টাকায়। জিনিসপত্রের এহেন দামের কারণে বাজারেই আসতে মন চায় না। কিন্তু কিছু তো করার নেই। খেতে তো হবে। যত জ্বালা আমাদের সাধারণ মানুষের।

এম আর ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতারা ইচ্ছে করেই দাম বাড়ায়। মানুষ বেশি দামে বিক্রি করা জিনিসপত্র কেনা বন্ধ করে দিলে ব্যবসায়ীরা এমনিই দাম কমিয়ে দেবে। কিন্তু সেটা তো মানুষ করে না। যাদের টাকা আছে, তারা ঠিকই বেশি দাম দিয়ে কিনছে। আর বলির পাঠা শুধু আমাদের সাধারণ মানুষকে হতে হচ্ছে। কারণ দাম তো কমবে না। তাই এই বাড়তি দাম দিয়েই কিনে খেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
এসসি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।