ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদ পরবর্তী লেনদেনে গতি বেড়েছে পুঁজিবাজারে, কাটছে সংকট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
ঈদ পরবর্তী লেনদেনে গতি বেড়েছে পুঁজিবাজারে, কাটছে সংকট

ঢাকা: আস্থার সংকট ও মন্দা কাটিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।  রমজান মাসের শুরু থেকে তলানীতে যাওয়া লেনদেনের গতি বাড়তে থাকে।

যার ধারাবাহিকতা ঈদ পরবর্তী বাজারেও দেখা গেছে।

ঈদ পরবর্তী বাজারে সূচকের টানা উত্থানের পাশাপাশি চলতি মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হতেও দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে এসেছে। তাই ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজারের এই গতিশীলতা ধরে থাকুক, এমনটাই প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পুঁজিবাজারে সূচকের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। বাজারে লেনদেন কমার পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিরলস চেষ্টায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেই সংকট দূর হয়েছে ও বাজারে লেনদেনের গতি বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ মন্দার পর ঈদের আগ থেকেই বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কারণে কিছু কিছু কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কমিশনও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপান সফর করেন। সব মিলিয়ে আমরা মনে করছি, ঈদ পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে। যারা সাইডলাইনে বসে ছিল তারাও বিনিয়োগে আসতে শুরু করেছেন। ঈদ পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হচ্ছে। বাজারের গতিশীলতার স্বার্থে অতি দ্রুত বন্ডে বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটেডের বাইরে রাখার বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের ওপরে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, সেটা রোধ করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কোম্পানিগুলো যাতে ইপিএসের ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে দেয়, সেজন্য আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।  

এতে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করবে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে, ঈদ পরবর্তী সপ্তাহে (২৪-২৭ এপ্রিল) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৫২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ১০৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় এক হাজার ৪৭৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। ঈদের পর প্রথম সপ্তাহেই ডিএসই বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে তুলনায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৫২ শতাংশের বেশি। যা ঈদ পরবর্তী বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

এ নিয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজার নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল শিগগিরই দেখতে পাবো বলে আমরা আশাবাদী।

একই সঙ্গে, তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে এক্সপোজার সংশোধনী সংক্রান্ত প্রস্তাবনা দ্রুত সমাধান হলে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং লেনদেন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লম্বা সময় ধরে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এই বাজার থেকে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা দূরের কথা, পুঁজিই ধরে রাখতে পারছিল না। তবে ঈদ পরবর্তী সময়ে লেনদেনের এই গতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
এসএমএকে/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।