এইচএসবিসি ব্যাংক বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব উর রহমান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রা যে শুরু হয়ে গেছে, তার উদাহরণ সর্বত্র। ২০২০ সালে যখন এখানে করোনা মহামারির ধাক্কা এসে লাগে, একটি সনাতন ও একান্নবর্তী পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে প্রথম মনে হয়েছে পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার বিষয়টি।
টিকা আবিষ্কার হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রথম ডোজ এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকার রেজিস্ট্রেশন, নোটিফিকেশন থেকে শুরু করে কেন্দ্রে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে টিকা দিয়ে বের হয়ে আসা সবই হয়েছে কোনোরকম ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ছাড়া। বিভিন্ন এয়ারপোর্টে টিকা কার্ড ডাউনলোড করে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইমিগ্রেশন অফিসারকে দেখাতে পেরেছি। যারা অ্যাপসটি ডেভেলপমেন্ট করেছেন, পাঁচজন ইঞ্জিনিয়ারই ছিলেন বাংলাদেশি বাঙালি। আজ এ অনুষ্ঠানে যারা বসে আছি তাদের শতভাগ না হলেও ৯৯ ভাগ মানুষের হাতে স্মার্টফোন আছে। এটাকে স্মার্ট বাংলাদেশ না বললে কোনটাকে বলব
পদ্মা সেতুর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও স্মার্ট পরিকল্পনার ফলে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব বাংলাকে সংযুক্ত করেছে এ সেতু। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে, দারিদ্র্য লাঘব হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবনেও এর প্রভাব কম নয়। আমার বাবার বয়স ৮৫ বছর। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ভাগ্যান্বেষণে তিনি ঢাকা এসেছিলেন। তাঁদের সমস্ত জমি নদীর ভাঙনে চলে গিয়েছিল। অনেক বছর নিজের বাড়িতে যাননি। পদ্মা সেতু হওয়ায় বহুবছর পরে আমি বাবাকে মাদারীপুর জেলার শিবচরের নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউটে নিয়ে গিয়েছিলাম, যেখানে তিনি তাঁর শৈশব ও কৈশোরে লেখাপড়া করেছেন। তিনি দীর্ঘ যাত্রা সহ্য করতে পারেন না। আমি তাঁকে বোঝাতে পেরেছিলাম দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব। বড় সন্তান হিসেবে আমি বাবা-মাকে তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছিলাম পদ্মা সেতুর কারণে। এ গল্পটি শুধু আমার নয়, অগণিত মানুষের। এই মানুষগুলোর দোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন।
মাহবুব উর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্বোধন করেছিলেন বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা তখনই জেগে উঠেছিল। ৪৩ বছর পর ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয়। ব্যাংকিং পর্যায় থেকে আমার ব্যাংক এইচএসবিসি এ সফল বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত ছিল। আকাশবীণা ও হংসবলাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নাম। এ দুটি ড্রিমলাইনারের অধিগ্রহণে আমার ব্যাংকের সম্পৃক্ততা ছিল। লিড অ্যারেঞ্জার হিসেবে বিশ্বের আরও কিছু ব্যাংকের সঙ্গে আমরা কাজ করেছি। কাতার থেকে এলএনজি আনার ব্যাপারে পেট্রোবাংলার প্রথম যে কমার্শিয়াল এলসি হয়, সেখানেও আমাদের সম্পৃক্ততা ছিল। এসব উন্নয়নে এইচএসবিসির সম্পৃক্ততা ছিল এটা বড় বিষয় নয়, স্মার্ট অবকাঠামোর ধারাবাহিকতায় এই প্রতিটি বিষয় আমাদের অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরেছে। সামনে আমরা যাব। দেখতে হবে আমরা কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি, কীভাবে এসেছি। স্মার্ট অবকাঠামোর কারণেই আমাদের আজকের অবস্থান ও আত্মপ্রত্যয় জেগে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ব্যাংকার বলেন, আমরা দেখছি শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ তরতর করে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু আমরা প্রায়ই বিমানের যাত্রীদের আনা-নেওয়া করি দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে। অথচ চাইলে চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে এই আসিয়ান এলাকার প্রতিটি সিটিতে আমরা মানুষ নিয়ে যেতে পারব। আমরা ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার চাই। এ ট্রানজিট প্যাসেঞ্জারের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলবে আমাদের বাংলাদেশ বিমান- এটাই চাওয়া।
এইচএসবিসি বিশ্বের অন্যতম আন্তর্জাতিক ব্যাংক। ব্যাংটি বলেছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ২৬তম ইকোনমি হবে এবং নবম বৃহত্তম কনজ্যুমার মার্কেট হবে। এ দুটোকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) দিয়েছেন তার ধারাবাহিকতা দরকার। আমরা সবাই এ যাত্রায় সহযাত্রী হব।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
এসআইএস