ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

টানা ছুটিতে সাজেকে পর্যটকদের থেকে আয় ২ কোটি টাকা

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
টানা ছুটিতে সাজেকে পর্যটকদের থেকে আয় ২ কোটি টাকা

রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সবচেয়ে বড় উপজেলার নাম বাঘাইছড়ি। এ উপজেলার অন্তর্গত রূপ, বৈচিত্র্যে অনন্য দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক পর্যটকদের কাছে আবেগের নাম।

এখানে দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে, মন্ত্রী সকলে এ অঞ্চলটির প্রাকৃতিক অপরূপ রূপে গুণে মুগ্ধ হয়েছেন। সাজেকের উত্তরে ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা, আগে ভারতের মিজেরাম রাজ্য এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ি জেলা। এর আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল।

‘রুইলুই , কংলাক এবং হামাড়িপাড়া গ্রাম নিয়ে এ ইউনিয়ন গঠিত। এ ইউনিয়নটি অনেক পুরোনো। অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০-১৮৮৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে লুসাই, পাংখোয় এবং ত্রিপুরা জাতিসত্তার বসবাস।

সাজেক ভ্যালি থেকে রাঙামাটির বেশিরভাগ অংশ দেখা যায় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলা হয়। কর্ণফুলী নদী থেকে উৎপত্তি সাজেক নদী থেকে সাজেক ভ্যালি নাম এসেছে। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে পর্যটকদের কাছে ততই সাজেকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গড়ে উঠছে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্তোরাঁ। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হতে পর্যটকরা ছুটে আসে। এখানে পাহাড়-মেঘের লুকোচুরি, সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রকৃতি এমন রূপধারণ করে যা চোখে না দেখলে যে কারো বিশ্বাস হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাজেকে বর্তমানে ১৫০টি কটেজ এবং ১৭টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। টানা তিন দিনের ছুটিতে হোটেল-মোটেলগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। ভরপুর ছিল রেঁস্তোরাগুলো। অনেক পর্যটক হোটেলে জায়গা না পেয়ে দিনে এসে দিনে ফিরে গিয়ে খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থান করেছেন। আবার অনেকে টাবু টাঙিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন।  হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে বেজায় খুশি। গত কয়েকমাস বৃষ্টির কারণে ব্যবসার যে মন্দা গেছে তা গত তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের ঢলে মিঠে গেছে।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সাজেক আসার পরিকল্পনা বহু বছর ধরে আসছি। রাঙামাটিতে অনেকবার আসা হলেও সাজেকে কোনো দিন আসা হয়নি। এ প্রথম সাজেকে আসলাম। এমন সৌন্দর্য আগে কখনো দেখিনি। অনেক ভালো লেগেছে।

এ পর্যটক আরও বলেন, তবে সাজেকের প্রকৃতিকে ধরে রাখতে হলে যত্রতত্র হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট না করায় উত্তম। এভাবে এলোমেলো গড়ে উঠলে এমন অপরূপ প্রকৃতি একদিন বিলীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ পর্যটন শিল্পটাকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে গড়ে তুলতে হলে একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে ভালো।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ বাংলানিউজকে বলেন, গত তিন দিনের ছুটিতে সাজেকে প্রায় সাড়ে আট হাজার পর্যটক গমন করেছে এবং ব্যবসা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। টানা বৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদেরও যে ক্ষতি হয়েছে আশা করছি, কয়েক দিনের আয়ে তারা তা পুষিয়ে নিতে পারবেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বাংলানিউজকে বলেন, সাজেক একটি প্রকৃতির অপরূপ শহর। এমন প্রকৃতি যে কাউকে আকৃষ্ট করে, মনে প্রশান্তি দেয়।

জাতীয় এ সংসদ সদস্য আক্ষেপের সাথে বলেন, দিনদিন সাজেকে কটেজের সংখ্যা বাড়ছে। চারদিক ময়লা-আবর্জনা বাড়ছে। পাহাড় দূষণ হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না।  প্রকৃতি এমন দূষণ সহ্য করতে পারবে না। যত্রতত্র এখানে, সেখাণে কটেজ গড়ে না তোলে পরিকল্পনা করে গড়ে তোলা দরকার।

স্থানীয় এ জনপ্রতিনিধি বলেন, আমরা একদিনের ব্যবসার কথা চিন্তা করলে হবে না। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসার কথা চিন্তা করতে হবে। প্রকৃতি যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সাজেকে পর্যটক আসবে না। এজন্য এখনই সময় পরিকল্পনামাফিক সাজেকের রূপ-বৈচিত্র্য ধরে রাখতে ময়লা-আবর্জনা ধ্বংসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা, পাহাড়ের ক্ষতি না করা এবং পাহাড়ের পাদদেশে অধিক রিসোর্ট গড়ে না তোলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।