ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব

ঢাকা: পোশাক শিল্পের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। চলতি বছরের আসছে নভেম্বরে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা হবে।

রোববার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে ‘গার্মেন্টস খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে এই মজুরির প্রস্তাব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সর্বশেষ ২০১৮ সালে নির্ধারণ করা হয়। সে সময় মজুরি নির্ধারিত হয় ৮ হাজার টাকা। মূল্যস্ফীতি, শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় সিপিডি ৯ হাজার ৫৬৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন এই ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই মুহূর্তে পোশাক খাতে মজুরি পুনর্নিধারণের একটা প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিষয় আলাপ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেখছি শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনাগুলো হাজির করছেন। অন্যদিকে, মালিক পক্ষের দিক থেকে সরাসরি কোনো প্রস্তাবনা না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এগুলোর আলোকে আগামীতে নতুন মজুরি পুনর্নির্ধারিত হবে, যেটা ২০১৮ সালে সর্বশেষ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গার্মেন্টস খাতের মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জায়গা থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে সামনে যেহেতু নির্বাচন।

তিনি আরও বলেন, ২৭ শতাংশ কারখানা মালিক মনে করেন ১২ হাজার টাকা এবং এর ওপরে প্রায় ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। আবার শ্রমিক সংগঠনগুলো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করেছেন। পোশাক খাতে জড়িত শ্রমিকের পরিবার ছোট হয়ে আসছে। আমরা গ্রেড সেভেনের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। আমরা মনে করি গ্রেড সেভেনে একজন পোশাক শ্রমিকের এতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।

বৈঠকে পোশাক খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তামিম আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যখন মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, সে সময় এসে এই মজুরি নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনাইটেড নেশন্সের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকের এই ন্যুনতম মজুরিকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ পোশাক কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতের ৬ জন স্টেক হোল্ডারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে পোশাক শ্রমিকদের আমরা কম বেতন দিচ্ছি। ২০১৮ সালের যে মজুরির কথা বলা হলো সেটা গত ৫ বছরের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা যদি দেখি, তাহলে দেখবো সম্যকভাবে বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ৫ বছরে এটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ৪২ দশমিক ১ শতাংশ ফ্যাক্টরিতে গ্রেডিং সিস্টেমটাই নেই। এর ফলে ন্যুনতম মজুরি বোর্ড থেকে সিলেক্ট করা গ্রেডওয়াইজ কি তারা বেতন দিচ্ছে না? সেখানে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যদিও গ্রেডিং সিস্টেম অনুযায়ী বেতন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। বিজেএমইএ, বিকেএমিইএ’র মেম্বার না এমন কারখানায় এই নন গ্রেডিং সিস্টেমটা বেশি।

ন্যূনতম বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, আমাদের টার্গেট হলো নভেম্বরের মধ্যে আমরা একটা ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করতে পারব৷ আমরা ইতোমধ্যে শ্রমিক ইউনিয়ন ও সংগঠন থেকে কিছু স্মারকলিপি পেশ করেছি৷ আমরা বোর্ড সভায় এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই একটা মজুরি বোর্ড গঠন করব।

শ্রমিক-মালিক দুই পক্ষই যাতে ভালো চলতে পারে। কারখানাগুলো টেকসই হয়। বন্ধ না হয়। কারণ, কারখানা বন্ধ হলে তো শ্রমিকরা শেষ৷  এজন্য একটা গ্রহণযোগ্য বেতন কাঠামো প্রস্তুত করা কঠিন। আমরা তবুও চেষ্টা করছি।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো আছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে চালু রাখা যায়। এই মুহূর্তে আমরা নতুন কর্মসংস্থান তো দূরের কথা, পুরনোদের কর্মসংস্থান ধরে রাখাই কষ্টকর।

জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে কারখানার আধুনিকায়ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সব জায়গায় গার্মেন্টসে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সেখানে আমরা নতুন বাজার খোঁজার চেষ্টা করছি। রি-সাইক্লিং, গ্রিন এনার্জি নিয়ে কাজ করছি। নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী আশা করছি শ্রমিক-মালিক বৈষম্য কমে আসবে৷

ক্রিশ্চিয়ান এইডের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন, বিকেএমইএ’র এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম আলী প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।