ঢাকা: বাংলাদেশ এক ভিন্ন ধরনের জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। এর আগে এমনটি হয়নি বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, আগে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেও এবার রাজনীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এবার নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে ভিন্ন একটি দেশের জড়ানো এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে ‘আইএমএফ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল উপস্থাপনায় তিনি এসব কথা বলেন। এটি সঞ্চালনা করেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। শিগগিরই এ বিষয়ে জানা যাবে যে, বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে থেকে ৬৮১ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে। যদি না কোনো বড় শক্তি ভিন্ন কিছু করতে না চায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এবারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে ভিন্ন দেশ যুক্ত আছে। এটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তারপরও আইএমএফয়ের ঋণ ছাড়ের পথে কেউ বাধা হবে বলে মনে হয় না। আবার এমনও দৃষ্টান্তও আছে। অতীতে আফ্রিকার দেশ সুদানকে আইএমএফয়ের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ফাইনাল ঘোষণার আগের দিন উল্টো ঘোষণা আসে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ঝুঁকি তৈরি করছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমে না। এর কারণ, মুষ্টিমেয় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকা। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্য ঠিক করলেও লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না।
ডলারের বিনিময় হার হঠাৎ করে বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতির। এজন্য ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের যে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে তা ভুয়া, অসত্য। বাজারে ডলারের একাধিক বিনিময় হার থাকার কারণে ব্যাংকগুলো এটি করে থাকে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যেখানে আছে সেখানে ধরে রাখতে হবে। সেটা ১৭ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে ধরে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সেটা পারবে; সেটার জন্য চেষ্টা করছে। এ জন্য বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে থেকে ধার নেওয়ার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব, চীন বা ভারতের কাছ থেকে দুই বিলিয়ন ডলার ধার পেতে পারে। তবে এটি শ্রীলঙ্কার মতো পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার মতো ধার নয়। এ ডলার ধার শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো পর্যায়ে না যাওয়ার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে।
রাজস্ব আদায় বাড়ানো পুরোপুরি অটোমেশন ছাড়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে করদাতা ও আদায়কারীর মধ্যে সরাসরি দেখা হওয়া বা ফোনে যোগাযোগ হওয়ার মতো মাধ্যম রাজস্ব বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে; বলেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে এবার প্রথম বারের মতো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা যুক্ত হওয়ার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক জায়গাগুলো তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতিকে সচল করবে এমন আমদানি কমেছে। আমদানি কম হওয়ার কারণে রাজস্বেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে রাজস্ব কমবে, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য নতুন করদাতাকে খুঁজে বের করার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে দুর্নীতি দূর, অটোমেশন ও কর আদায় ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৩
জেডএ/আরএইচ