রাঙামাটি: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন মাছ শিকার করা হয়েছে। এ থেকে শুল্ক আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
হ্রদে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণে শৃঙ্খলা, শতভাগ শুল্ক আদায়সহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে এ সফলতা এসেছে বলে জানিয়েছে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন।
গত বছর কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এবং কার্প জাতীয় মাছের আধিক্য বাড়াতে ২০ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত মাছ শিকার ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। হ্রদে পানি না বাড়ায় দুই দফা বাড়িয়ে এটি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। পহেলা সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে শুরু হয় হ্রদে মাছ শিকার। হ্রদ থেকে আহরিত মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে- কাঁচকি, চাপিলা ও রুই জাতীয় মাছ। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও জেলেদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ড্রেস কোড চালু, টহল টিমের জন্য ট্র্যাকিং ডিভাইস সিস্টেম চালুসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া মাছ শিকারের সময় ২৪ ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়। অর্ধেক সময় পেলেও হ্রদ এলাকায় নিবন্ধিত ২৬ হাজার ৭৯১ জেলে রেকর্ড পরিমাণ মাছ আহরণ করেছেন।
কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়ী বুলবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিগত ২৬ বছর ধরে এখানে ফিশারি ঘাটে ব্যবসা করছি। এ বছর অন্যান্যবারের তুলনায় ভালো মাছ পেয়েছি এবং লাভবান হয়েছি।
কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, মৎস্য আহরণে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় ব্যবসায়ী এবং জেলেদের মধ্যে সমন্বয় ফিরে এসেছে। আহরণের সময় সীমা কমানো হলেও ব্যবসা ভালো হচ্ছে বলে জানান তারা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই, মারিশ্যা ও মহালছড়ির চারটি মৎস্য অবতরণ ঘাটে ৪ হাজার ১৩৩ টন মাছ আসে। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৮ কোটি ৬২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮৪ টন মাছ থেকে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯২৮ টন থেকে ৭ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ১৩১ টন মাছ থেকে ৯ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল।
এ ছাড়া গত বছরে হ্রদে এগারোশো অভিযানে চার হাজার কেজি মাছ, ৩৫০টি নৌকা, তিন লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়। এ থেকে শুল্ক আদায় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভুঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, হ্রদে মাছের উৎপাদন ও আহরণ প্রতি বছর কম ছিল। এজন্য হ্রদ-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে শৃঙ্খলায় আনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। এখন জেলে থেকে ব্যবসায়ী সবার মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে। এতেই এসেছে সফলতা।
১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। এতে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ থেকে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আয় করে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
আরএ