ঢাকা: প্রতি বছর রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বেইলি রোডজুড়ে বাহারি ইফতার আয়োজনের দৃশ্য নগরবাসীর নজর কাড়তো। এ এলাকা মৌ মৌ করতো হরেক পদের ইফতারের ঘ্রাণে।
তবে এবার সেই চিরচেনা মুখরতা নেই বেইলি রোডে। কিছু দিন আগে গ্রিন কোজি কটেজে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আতঙ্ক এলাকাজুড়ে এখনো বিরাজমান। ফলে একাধিক রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হলেও যেগুলো খোলা আছে তাতে নেই ক্রেতার ভিড়। এমন সঙ্কটের মধ্যেও ক্রেতারা রমজান ঘিরে ইফতার বিক্রির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছেন। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বেইলি রোডে ইফতারের যে জৌলুস ছিল তা হারিয়ে গেছে। ফলে এখন ক্রেতা কমে গেছেন। তবে ধীরে ধীরে মানুষ ফিরতে শুরু করবে বেইলি রোডে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে শান্তিনগর মোড় থেকে বেইলি রোডের শেষ মাথা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি ইফতারের দোকান দেখা যায়। দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা ছিল একদমই কম।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও ইফতার বিক্রি করছে মাত্র ৮-১০টি প্রতিষ্ঠান। ফুটপাতে ইফতার নিয়ে কাউকে বসতেও দেখা যায়নি। এসব দোকানে মিলছে হরেক পদের ইফতারসহ নানা মুখরোচক খাবার।
এর মধ্যে আছে মগজ ভুনা, খাসির হালিম, খাসির গ্রিল চাপ, গরুর চাপ, লুচি, কাচ্চি বিরিয়ানি, ফিরনি, খাসির লেগ রোস্ট, বোরহানি, আস্ত চিকেন রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, চিকেন সমুচা, চিকেন ললি, জালি কাবাব, শিক কাবাব, ভেজিটেবল রোল, স্প্রিং রোল, কিমা চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, বেসন চপ, ছোলা, বাসমতির জর্দা, চাটনি, পনির সমুচা, নিমক পোড়া, বুন্দিয়া, হালিম, দইবড়া, সুতি কাবাব, রেশমি কাবাব ও কিমা পরোটা। এছাড়া ফাস্টফুড আইটেমের মধ্যে বার্গার, হটডগ, স্যান্ডউইচ, সমুচা, চিজ বল, চিকেন সাসলিক, পেস্ট্রি, চিকেন ফ্রাই, পিৎজা ও আইসক্রিমও মিলছে।
হক বেকারির একজন ইফতার বিক্রেতা জানান, আগুনের ঘটনার পর এমনিতেই বেইলি রোডে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইফতারির ক্রেতা কম। অন্যান্য বছর জোহরের পর থেকেই গোটা এলাকায় ইফতার উৎসব শুরু হতো। এবার মনে হয় যেন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে ব্যস্ত এই রাস্তা। দোকানিরা ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে অনেকটা অলস সময় পার করছেন, যা একটু বিক্রি হয় ইফতারির আগ মুহূর্তে। তাও প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা নেই। যারা আসেন তারাও আর আগের মতো ইফতার কেনেন না। একান্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণ কিনে ঘরে ফেরেন।
জাগেরি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা মেলে চাপ, কাবাব, গরুর মাংসের আইটেমসহ নানান মুখরোচক খাবারের। এখানে চিকেন সিঙ্গারা ৬০ টাকা, কাটলেট ৯০ টাকা, লেগ পিস ৯০ টাকা, ফিস ফিঙ্গার ৭০ টাকা, গরুর তেহারি ২৯০, মোরগ পোলাও ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাবাব আইটেমসহ ১০০ ইফতার পণ্য বিক্রি করছে তারা।
জাগেরি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার নাজমুল হোসেন বলেন, মানুষ এখনো আতঙ্কিত। রেস্তোরাঁ খোলা কম দেখে আমাদের এখানে বেচাকেনা ভালো। তবে অনেক রেস্তোরাঁই এবার ইফতারির আয়োজন করেনি।
আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজের একটু সামনেই এ ওয়ান রেস্তোরাঁ। সেখানেও বিক্রি হচ্ছে মুখরোচক ইফতার। দোকানের ম্যানেজার পারভেজ বলেন, যেটা ঘটেছে সেটা ট্র্যাজেডি। এবার আমাদের প্রস্তুতিও সীমিত। মাত্র ৫০ আইটেম করেছি। আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে চাই। এজন্য পুলিশ-প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ভিন্ন স্বাদের ইফতারের স্বাদ গ্রহণ করতে তারা বেইলি রোডে এসেছেন। তবে এবার পরিসর অনেক ছোট দেখে হতাশ তারা। আবার অনেকে সে বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
নাইমুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন সবাই নিয়মের মধ্যে এসেছে। ফুটপাতে কেউ নেই। আগের ঘিঞ্জি পরিবেশটা নেই। একটা দুর্ঘটনা হয়েছে, আমরা কেউ চাই না এর পুনরাবৃত্তি হোক।
সুইস বেকারিতে ইফতার কিনতে আসা আজম আহম্মেদ বলেন, মানুষের ভেতরে তো আতঙ্ক আছেই। খাবার খেতে এসে এতো মানুষ মারা গেল। এখানে আসার সময় পোড়া ভবনের দিকে চোখ যায়। তাতে ভীতি আরও বেশি কাজ করে। ইফতার দ্রুত কিনে বাসায় চলে যাবো। তবে আমরা সবাই চাই বেইলি রোডের ইফতার তার আগের জৌলুস ফিরে পাক দ্রুত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
এইচএমএস/এইচএ/