ঢাকা: পহেলা বৈশাখ মানে মাটির থালায় পান্তা ইলিশ, মঙ্গল শোভাযাত্রায় একতারা হাতে অংশ নেওয়া। বৈশাখ মানে ছোটদের হাতে মাটির হাতি, ঘোড়া, টেপা পুতুল, বৈশাখী মেলা থেকে টমটম, ডুগডুগি কিনে বাড়ি ফেরা।
আর মাত্র দুদিন পরই বাঙালির ঐতিহ্যের পহেলা বৈশাখ। ওইদিন রং-বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে বৈশাখকে বরণ করে নেবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই। প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঘরে-বাইরে পড়বে মাটির থালায় পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। এসব মেলায় পাওয়া যাবে লোকসামগ্রী।
তবে বৈশাখের প্রায় এক মাস আগে থেকেই দোয়েল চত্বরে মিলছে বৈশাখী বিভিন্ন লোকজ পণ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিপরীত পাশের এই স্থান সবার কাছেই পরিচিত ঘর সাজানোর বিভিন্ন শৌখিন পণ্যের জন্য। এখানে প্রায় ২৫-৩০টি দোকানে সারাবছর কাঠ, মাটি ও বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি হয়। তবে বৈশাখ এলে বাড়ে লোকজ পণ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের তৈরি পাখা, কুলা, চালনিতে ‘শুভ নববর্ষ’ লিখছেন মৃৎশিল্পীরা। কেউবা রং করছেন মাটির হাড়ি, প্লেট, গ্লাসে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে টমটম গাড়ি, ডুগডুগি, বাঁশি, একতারা, মাটির টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, পাটের শিকা, কৃষকের মাথার মাথাল, পাখির বাসা কিনে এনে দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও আসছেন বৈশাখী এসব লোকজ সামগ্রী কিনতে। আবার অনেকে বৈশাখে নিজের অফিস বা রেস্টুরেন্ট সাজানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন এসব সামগ্রী।
তবে ব্যবসা মন্দ যাচ্ছে দোয়েল চত্বরের এসব বিক্রেতাদের। তাদের দাবি, ঈদ উৎসবের কারণে ঢাকার অনেকে গ্রামে গেছেন, তারা বৈশাখের ছুটিও কাটিয়ে আসবেন, সে কারণে কেনাবেচা কম। আর অর্থনৈতিক মন্দার কারণেও এবার বৈশাখী লোকজ পণ্য কেনায় ক্রেতাদের আগ্রহ নেই বলে জানান তারা।
প্রায় ২০ বছর ধরে দোয়েল চত্বরে লোকজ ও শৌখিন পণ্য বিক্রি করছেন সোহেল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত চার বছর ধরে ব্যবসা নেই। ঈদে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ক্রেতার সংকট রয়েছে। আগে বৈশাখের আগে এখানে হাড়ি-পাতিল রং করার ধুম পড়ে যেতো। কিন্তু এবার তা একেবারেই নেই। আগে আমরা বৈশাখ ঘিরে দুই-চার লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতাম। এখন সেখানে ৫০ হাজারও করতে পারি না। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।
প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসায় আছেন ইলিয়াস। তিনি বলেন, এবার বেচাকেনা নেই। ঈদে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা কম। তাছাড়া মানুষের হাতে টাকাও নেই। বৈশাখের জন্য আলাদা করে খরচ করার অবস্থা নেই মানুষের। এ কারণে বৈশাখী পণ্যের বেচাকেনা নেই।
মো. সাইদুল নামে এক বিক্রেতা বলেন, আগে আমরা বৈশাখের এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতাম। একেবারে বৈশাখ পর্যন্ত আমাদের ব্যস্ততা থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেটা নেই। ঈদের কারণে মানুষ বাড়ি চলে গেছে। ঢাকায় মানুষ নেই। আমাদের ক্রেতাও নেই। আমরা মাটির জিনিসগুলো ঢাকার আশপাশ থেকে কিনে এনে এখানে রং করি। আর বাঁশের জিনিস কুষ্টিয়া থেকে কিনে আনি।
বিক্রেতাদের কথার সত্যতা মেলে এসব দোকান ঘুরে। আগে বৈশাখের কয়েকদিন আগে থেকে ক্রেতাদের ধুম পড়তো এসব দোকানে। কিন্তু এবার ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তবে যারা সংস্কৃতিমনা, তারা ঠিকই কেনাকাটা করতে আসছেন।
বৈশাখ উপলক্ষে দোয়েল চত্বরে মাটির হাড়ি, প্লেট কিনতে এসেছেন অনলাইনে জুয়েলারি ব্যবসা করা এলোরা রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পৃথিবী যত মর্ডান হচ্ছে, আমরা তত আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছি। এটি খুবই দুঃখজনক। তবে আমি এ সংস্কৃতি ধরে রাখতে চাই। তাই বৈশাখে মাটির থালা-বাটি কিনতে এসেছি।
বৈশাখ উপলক্ষে রেস্তোরাঁ সাজানোর মাটির পণ্য কিনতে দোয়েল চত্বরে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জেসি সাংমা। তিনি বলেন, আমাদের কালচার এখন মিক্সড হয়ে গেছে। বাঙালিরা অন্য সংস্কৃতি ধারণ করছে। তবে আমরা আমাদের রেস্তোরাঁয় বৈশাখে বাঙালি সংস্কৃতি রাখতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৪
এসসি/আরএইচ