ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কর ব্যবস্থার সংস্কার না হলে ৫০ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর ঝুঁকি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
কর ব্যবস্থার সংস্কার না হলে ৫০ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর ঝুঁকি

সংস্কারমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু কর ছাড় পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করলে চার বছরে ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা যেতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন কর ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার।

আর তা না করতে পারলে ২০৪১  সাল নাগাদ দেশ ৫০ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।

পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ: আবশ্যিকতা এবং একটি পথনকশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল্য প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।   

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারীতে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান।  

আহসান এইচ মনসুর বলেন, কর ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি। ক্রমবর্ধমান ঋণের দায় এবং রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারে সুদের অর্থপ্রদান, ক্রমবর্ধমান বেতন পরিশোধ, ভর্তুকি ও পেনশন প্রদানের চাপসহ মানব সম্পদ এবং সামাজিক সুরক্ষার  ব্যয়ের চাপ বাড়বে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তুলনায় বাংলাদেশের রাজস্ব জিডিপির অনুপাত বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে কম। এতো দুর্বল রাজস্ব আদায়ের অবকাঠামো আমাদের স্বল্প মেয়াদে অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে এবং মধ্য মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০৪১-কে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) সহায়তায় বাংলাদেশকে আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য কাজ চললেও রাজস্ব আদায় না বাড়ালে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা ব্যাহত হবে, তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় নিয়ে নানা কথা বলা হয়েও রাজস্ব সঠিকভাবে ব্যয়ে কেউ কোন কথা বলছে না। কিন্তু অপচয়হীন সঠিক ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রাজস্ব বোর্ডের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে বেশি কথা বলা হয় না। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান কিছু কথা বলেছেন। এনবিআরের গৃহীত কর্মকাণ্ড নিয়ে এভাবে আরও বেশি কথা বলা প্রয়োজন।

দীর্ঘ মেয়াদের করছাড় (ট্যাক্স এক্সামশন) দেওয়া ব্যবসার জন্য ক্ষতি উল্লেখ করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য পাঁচ বছরে ১২০টির বেশি কর ছাড়া দেওয়া হয়েছে। ২৫ বছর আগে যে সব কর ছাড়া দেওয়া হয়েছিল, এখনো সেগুলো চলছে। এগুলো এখন বিবেচনা করার সময় এসেছে। নিজেদের সন্তানকেও আমরা ৩০ বছর ধরে পকেট খরচ দিয়ে চালাই না।      

রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে ইনফরমাল খাতে করের আওতা বৃদ্ধি তাগিদ দেন এফসিসিআইয়ের সভাপতি মাহাবুবুল আলম। বলেন, রাজস্ব আদায়কে গতিশীল করতে নীতি প্রণয়নকারী ও সংগ্রহকারীকে আলাদা করতে হবে। নীতি প্রণয়নকারী ও আদায়কারী আলাদা হলে রাজস্ব আদায়ের স্থবিরতা কাটবে।

সুদ হার মরার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে দেখা গিয়েছে। আগামী মাসে সুদ হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর কোনোভাবেই যেন সুদ হার না বাড়ে।

আলোচনায় বন্ড অটোমেশনের তাগিদ দেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম। বলেন, বন্ড সুবিধা রপ্তানি বাণিজ্যের সুফল নিয়ে এসেছিল। এখন বন্ড ব্যবস্থা অটোমেশন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অটোমেশনের অভাবে ম্যাজিস্ট্রেসি শক্তি দেখানো হয়। যা ব্যবসা জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিতে চায় কিন্তু ট্যাক্স দেওয়ার কার্যক্রম সহজ করতে হবে। এ জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

রাজস্ব বৃদ্ধিতে তিনি বড় বড় বিয়ে অনুষ্ঠানকে করের আওতায় আনার পরামর্শ দেন।

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, সবাই রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। কিন্তু সক্ষমতার তৈরির পেছনে প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা কেউ বলেন না। এ জন্য প্রত্যাশার সঙ্গে উদ্যোগও নিতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা,এপ্রিল ৩০ ,২০২৪
জেডএ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।