ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিপিডির সংলাপে বক্তারা

‘অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্থনীতির মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
‘অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্থনীতির মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে’

ঢাকা: দেশে চাহিদার চেয়ে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬.৪ শতাংশ বেশি। তবে এই সক্ষমতা দেশের অর্থনীতির মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর মহাখালীতে ব্রাক ইন সেন্টারে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন।

সংলাপে মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি খাতে এখন ৬ সমস্যা। সমস্যাগুলো হলো—বর্ধিত উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও অনিয়মিত বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা; উৎপাদন ও বিতরণ ধীর গতি; নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রয়োজনীয় মনোযোগ না দেওয়া; ঝুকিপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক দুর্দশা।

তিনি বলেন, বর্তমানে অনগ্রিড, অফগ্রিড মিলে ৩৭,০৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ ভাগ রিজার্ভ সক্ষমতা। যেহেতু এর পেছনে অনেক ব্যয় আছে, এর জন্য এখন আর বাড়তি সক্ষমতার প্রয়োজন নেই। এখন যে ৩৭,০৩৮ মেগাওয়াট সক্ষমতা রয়েছে ২০৩০ সালেও এত লাগবে না। ১৯,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেই ২০৩০ সালে বিদ্যুতের যে প্রয়োজন তা মেটানো সম্ভব। আর ২৫ শতাংশ মার্জিন ধরলে ২৩,২৫২ মেগাওয়াট ধরলেই হয়। এখন দেখতে হবে নতুন করে ফসিল ফুয়েলকে প্রমোট করছে কিনা।

গত ১৪ বছরে এক লাখ ৫ কোটি টাকা ফসিল ফুয়েলের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে উল্লেখ করে খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের উচিত হবে যেকোনভাবেই হোক ফসিল ফুয়েল কমানো। একই সাথে ফেজিং আউটও ঘোষণা করার দরকার।

একদিকে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা, অন্যদিকে লোডশেডিং—এটি একটি বিপরীতমুখী দৃশ্য উল্লেখ করে সিপিডিরি এই গবেষণা পরিচালক বলেন, একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি দিতে পারছি না, অন্যদিকে সরবরাহ লাইনে কম সক্ষমতা, সেটাও একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো মাসে ১১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ডলার গুনতে হচ্ছে উল্লেখ করে খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ক্রুড অয়েলের আমদানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। কিন্তু খরচের দিকে তাকালে দেখা যাবে ৮০ শতাংশ। আর ডলারের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সরকার জ্বালানি আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে একটি কণ্টকাকীর্ণ পথে। এ জন্য ঝুঁকি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, আইটিএফসির কাছ থেকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে ঋণ নিতে হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৭ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ  ড. ম তামিম বলেন, বাংলাদেশে আধুনিক জ্বালানি নীতি নেই। ১৯৯৬ সালের পর আর কোনো নীতি করা হয়নি। এর ফলে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ফেইল করছে। যখন যে সমস্যা হচ্ছে, অ্যাডহক ভিত্তিতে জ্বালানি সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মো. আলাউদ্দিন  বলেন, প্রথমবারের মতো এবারের বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বরাদ্দ হয়েছে। এটা একটি ইতিবাচক দিক। এর ধারাবাহিকতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারিত হবে।

হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, সরকার বলেছিল—গ্যাসের দাম ডাবল দাও, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়া হবে। কিন্তু সরকার গ্যাস দিতে পারছে না। বাড়তি দামে ডিজেল কিনে কারখানা সচল রাখতে হচ্ছে। একে তো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি তারপর ওপর লোডশেডিং, সব মিলে আমরা বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে আছি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি নিয়ে সরকারের লক্ষ্যপূরণে প্রস্তুতি নেই। পুরো এনার্জি সিসটেম সম্পর্কে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা অস্পষ্ট। সংস্থাগুলোর ধারণা অস্পষ্ট এবং স্রেডার ধারণাও অস্পষ্ট। তাহলে ফোর্থ জেনারেশনের সঙ্গে সংগতি রেখে জ্বালানি নীতি কী হবে? এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার যে শব্দগুলো উচ্চারণ করে, বিষয়গুলো ভেতর থেকে উচ্চারিত হয় না। এ কারণে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না।

তিনি বলেন, সরকার বাজেটে কত টাকা দিচ্ছে, তা স্পষ্ট করতে হবে। তা না হলো ভোক্তা জর্জরিত হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছে না। কীভাবে আমি লুণ্ঠিত হচ্ছি, বঞ্চিত হচ্ছি বা অঙ্গীকার খর্ব হচ্ছে, সেটা তো ভোক্তা হিসেবে আমি বুঝতে পারব না। সরকারি কর্মচারীর বিদেশ ভ্রমণের টাকা, ঘুষের টাকা, বেতনের টাকা সব ভোক্তা বহন করে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।