সরকার নতুন করে কোনো টাকা ছাপাচ্ছে না, ফলে মূল্যস্ফীতিও আর বাড়বে না। এমন আশাবাদ অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের।
গত ২১-২৭ অক্টোবর ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে সাক্ষাৎকারে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
প্রশ্ন : আপনি এর আগে গভর্নর হিসেবে বিশ্বব্যাংকে বিভিন্ন সময় এসেছেন। এবারই আপনি সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আসলেন। আপনার অনুভূতি কেমন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এটা ঠিক যে আমি এর আগে বহুবার গভর্নর হিসেবে এসেছি। এবার তো প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে এসেছি। আবার পরিস্থিতিটাও ভিন্ন। ফলে এবার আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি, এত বড় সাড়া আগে কখনো পাইনি। সবাই আমাদেরকে এপ্রিশিয়েট করছে। আমরা যা চেয়েছি তাই পাচ্ছি।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আপনারা তা পূরণে কতটা সক্ষম হবেন বলে মনে করেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : দেখুন, আমি বলব আমার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। দেশের অর্থনীতির মঙ্গল করা ছাড়া আমাদের কোনো অভিপ্রায়ও নেই। সেই অভিপ্রায় নিয়েই আমি এখানে এসেছি।
প্রশ্ন : দেশের চলমান ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে এই বিশ্বসভায় কী ধরনের আলোচনা হচ্ছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এই পরিবর্তনটার আগে বাংলাদেশে অলিগার্ক ও ব্যবসা-রাজনীতির একটা কমফোর্ট জোন ছিল। সব মিলে তারা একাকার হয়ে লুটপাট করেছে। এখন তো সেগুলো এক এক করে প্রকাশ পাচ্ছে। বন্ধও হয়ে গেছে। এসবও আলোচনার বাইরে থাকছে না। তবে আমরা অর্থনীতিটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি।
প্রশ্ন : দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনি কোনো তদবির কিংবা বাধার মুখে পড়ছেন কি না।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : দেখুন, আমি তো আমার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনকে আমার কাছে আসাটাকেই অ্যালাও করছি না। আমার যেহেতু অন্য কোনো অভিপ্রায় নাই, তাই কোনো চাপও নাই।
প্রশ্ন : আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী এবার প্রবৃদ্ধি কম হবে, সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : নানা করাণে এবার প্রবৃদ্ধি কম হবে। কিন্তু সেটা ৪ শতাংশে নেমে যাবে তা বোধ হয় হবে না। এটা আরও বেশি হবে।
প্রশ্ন : মূল্যস্ফীতিটা কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে মনে করেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : দেখুন, এখানে অনেকগুলো কারণ আছে। বিশেষ করে টাকা ছাপিয়ে সংকট মেটানো। পণ্যের সরবরাহ সংকট। এসব হলো প্রধান কারণ। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আমাদের পরিকল্পনা হলো, নতুন করে কোনো টাকা ছাপাচ্ছি না। ফলে মূল্যস্ফীতি আর বাড়বে না।
প্রশ্ন : বাজার সিন্ডিকেট সম্পর্কে কিছু বলুন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : দেখুন আমাদের তো সিন্ডিকেটটাই মূল সমস্যা। ছোট একজন ব্যবসায়ী শুধু ডিম বিক্রি করে এক মাসে ১ লাখ টাকা মুনাফা করে। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের ব্যবসা নেই। এ ধরনের ব্যবসা ভেঙে ফেলা ও সে সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হবে। অহেতুক কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। বাজার ব্যবস্থায় আমরা সেটা ভেঙে ফেলব। চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
প্রশ্ন : বলা হয়, আপনি নাকি বাজারের সিন্ডিকেট বোঝেন না।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : হ্যাঁ, আমি শুনেছি (হাসি দিয়ে)। এমন কথাও তো এসেছে যে, আগের বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট চিনতেন, কারণ সিন্ডিকেটের পার্ট ছিলেন। আর আমি সেটা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : গত সময়গুলোতে ৯/৬ সুদের আড়ালে অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। অনেক ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা এগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি। এগুলো অবশ্য অল্প সময়ে ঠিক করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : আপনি তো এখানে অনেক দেশের মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন। দু-একটা উল্লেখ করবেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ : হ্যাঁ, তা হয়েছে। যেমন- সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতা রামনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এখানে তাদের কিছু কনসার্নের কথা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন : অতীত সরকার আপনাদের জন্য বড় একটা বাজেট রেখে গেছে। সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : আমরা বাজেটটাকে একটু ছোট করব। কাজ চলছে। এখানে রেভিনিউ আর ডেভেলপমেন্ট বাজেটটাকে একটু ছোট করা হবে। তবে খুব বেশি কমানো হবে না। এটা বাস্তবায়ন তো হচ্ছে।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৪