ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি প্রয়োজন

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি প্রয়োজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী

ঢাকা: বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে  বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিসিআইআইএসএস) এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।



‘বাংলাদেশ অ্যান্ড বিমসটেক: ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

বিআইআইএসএস এর বোর্ড অব গভর্নর-এর চেয়ারম্যান মুন্সী ফাইয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিমসটেক মহাসচিব সুমিত নাকান্ডালা ও বিআইআইএসএ-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।

দিনব্যাপী সেমিনারের অন্যান্য  সেশনে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিকল্প নেই। এই গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিমসটেক দেশগুলোর বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক আয়োজন করতে যাচ্ছে।

ওই বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ে বিমসটেক সদস্য দেশগুলো একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে বলেও আশা করেন তিনি।

গত বছর ঢাকায় বিমসটেকের সচিবালয় চালু হয়। গুলশানে অবস্থিত সচিবালয়টি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর এটাই বিমসটেক বিষয়ক প্রথম সেমিনার।

মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ সার্ক, বিমসটেক ও বিসিআইএম-ইসির মতো জোটগুলোতে সব সময়ই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু বিমসটেকক-ই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এটি অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল জোট।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিকতাবাদ এর লক্ষ্য হচ্ছে কার্যকর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক পর্যাদয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বিশেষত স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্ব ব্যবস্থায় এ ধরনের সহযোগিতার গুরুত্ব একটি আলাদা মাত্রা লাভ করেছে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক দক্ষিণ এশিয়ার ‘লুক ইস্ট’ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতির মাধ্যমে এ দুই অঞ্চলের সমন্বয় করে এক অভিন্ন প্লাটফর্ম তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, দুই অঞ্চলের  যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে দুই অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসাবে বিমসটেকের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগতভাবে  সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

বিমসটেক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এটি আগামী বছরগুলোতেও আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য, জ্বালানি সহযোগিতা ও মানুষে মানুষে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।  

মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও সেবা বিষয়ে বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত সমঝোতা দেখতে চাই।

বিমসটেক সদস্য দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর্কষণীয় উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে আমাদের স্থিতিশীল এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এজন্য আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সম্পদ সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং ব্যবহারকে বিমসটেকের প্রধান লক্ষ্য ধরা উচিত।

আসছে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ একটি টাস্কফোর্স বৈঠক আয়োজন করতে যাচ্ছে যেখানে বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ নিয়ে আন্তঃসংযোগ বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।

এই সমঝোতা স্মারক জ্বালানি খাতে সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত করবে বলেও মনে করেন মাহমুদ আলী।

বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগে স্বাক্ষরিত বিমসটেক এফটিএ-র বাস্তবায়ন হলে এটি এ অঞ্চলের বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি বৃদ্ধিতে জোড়ালো ভূমিকা রাখবে। বিমসটেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ ও ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে প্রতিনিধিত্ব করছে।

তিনি বলেন, এ কারণে এর লক্ষ্য হওয়া উচিত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে সফল আঞ্চলিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

বিভিন্ন রকম বৈচিত্র থাকা স্বত্বেও বিমসটেক সদস্যদেশগুলো অভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায় সরকার। এ উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিমসটেকের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির সাদৃশ্য রয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিমসটেক মহাসচিব বলেন, ২০১৫ সাল বিমসটেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি চলতি বছরেই সদ্যদেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ক চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে পারব।

বিমসটেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আসিয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিমসটেককেও এগিয়ে নিতে কার্যকর নেতৃত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিমসটেক মহাসচিব।

বিসিআইআইএসএস-র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ এক এম আবদুর রহমান বলেন, বিমসটেকের মূল লক্ষ্য এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা হলেও এটি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধির কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনটি সম্মেলন ও কয়েকটি মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন সফল করার মাধ্যমে বৃহত্তর উপ আঞ্চলিক সম্পর্ক সুদ‍ৃঢ়করণে নতুন উদ্যমে কাজ করছে বিসিআইএম।

তিনি বলেন, যেহেতু অঞ্চলটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। তাই সদস্য দেশগুলোর যৌথ প্রচেষ্টাই পারে এসব সম্পদের উন্নয়ন, বণ্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে। যা সবার অর্থৗনতিক উন্নয়ন ও নিশ্চিত করতে পারবে।  

১৯৯৭ সালের ৬ জুন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গড়ে তোলা হয় বিআইএসটি-ইসি। যার সদস্য ছিল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। প্রতিষ্ঠার বছরেই  সদস্য হিসাবে যোগ দেয় মিয়ানমার।

তখন সংস্থাটির নতুন নাম হয় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন বা বিআইএমএসটি-ইসি।

২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ জোটে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। তখন এর নাম চূড়ান্ত করা হয় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক।

এ বছরই সদস্যদেশগুলো  পারস্পরিক সহযোগিতার ১৪টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করার পাশাপাশি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে একমত হয়। তবে কোনোটাই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

সেমিনারে বিমসটেক সম্পর্কিত মোট আটটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৪, আপডেট: ১৫০৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।