ঢাকা: বিভিন্নজনকে চাঁদা দিয়ে অবৈধভাবে বাণিজ্য মেলার ভেতরে নানা রকমের খাবারের দোকান নিয়ে বসেছেন হকাররা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) নিয়োজিত ভ্রাম্যমাণ টিম অভিযান চালালে হকাররা দোকান রেখে পালিয়ে যাচ্ছেন মেলার আনাচে-কানাচে।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার দক্ষিণ পাশে ৫৬ নম্বর স্টলের সামনে দেখা যায় ভেলপুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন হকার। মাঝে মাঝে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ডাকছেন, ‘আসেন এই দিকে, ভেলপুরি মাত্র ২০ টাকায়। ’
১৫ টাকা দামের ভেলপুরি ২০ টাকায় কেন বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তারা মিয়া নামে এক ভেলপুরি হকার বলেন, ‘কতজনরে ট্যাহা দিয়া এইহানে দোকান দিতি হইছে জানেন। ৫ ট্যাহা লাভ না করলি এই ট্যাহা ওসুল হবেনে কেমনে?’
কাকে টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে একটু সাবধান হয়ে তিনি বলেন, ‘না না, এত কওয়া যাবি না। আপনি কেডা?’ এরপর কাছ থেকে জানা যায়নি আর কিছুই।
পেয়ারা নিয়ে বসা হকার মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, মেলার ভেতর ঢুকতে ২০০টাকা খরচ হয়েছে তার। কিন্তু কাকে এ টাকা দিয়েছেন তা কোনোভাবেই ফাঁস করলেন না তিনি।
ভেলপুরি বিক্রি করা আরেক হকার নজরুল ইসলাম ব্যবহার করেন অন্য কৌশল। তিনি জানান, মেলায় প্রতি রাতে মালের ট্রাকগুলোর ভেতরে দিয়ে দেন ভেলপুরির বস্তা। পরে টিকিট কেটে মেলার ভেতর এসে দোকান বসান।
সনি প্যাভিলিয়নের পিছনের দিকে দেখা গেলো ফুলের শো-পিস আর ছোলা নিয়ে বসেছেন হকার নুরু। মেলায় দোকান বসাতে টাকা লাগে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ফুলের শো-পিসের জন্য মেলার ভেতরের চাঁদাবাজদের দিতে হয়েছে এক হাজার টাকা। আর ছোলা দোকানের জন্য ১০০টাকা।
মেলার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বসা পেয়ারা বিক্রেতার কাছে পাওয়া গেলো অনেক তথ্য। তিনি জানান, পুলিশকে দিতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। সিকউরিটিদের চা-বিড়ি খাওয়ার টাকা দিতে হয়। আবার কোনো কোনো সিকিউরিটি পেয়ারা নিয়ে চলে যায় টাকা দেয় না। (এসময় সেখান থেকে পেয়ারা নিতেও দেখা যায় এক সিকউরিটি গাডর্কে)।
ওই পেয়ারা বিক্রেতা আরও বলেন, ‘যারা মেলার টেন্ডার নিয়েছে তাদেরও টাকা দিতে হয়। তারা আমগো শিখাইয়া দিছে ভেতরে ঢুকবি কিন্তু বড় স্যার আইলে পালাবি। ’
এতখানে টাকা দিয়ে লাভজনক ব্যবসা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কি করুম ভাই। ২০০ টাকা দিয়া যদি ৩০০ টাকা বাড়ি নিয়া যাইতে পারি হেইডাই লাভ। মেলার বাইরে তো সেডাও হয় না। ’
ইফাদ প্যাভিলিয়নের সামনের রাস্তায় দু’হকার চিৎকার করছে ‘আসেন মাত্র ৩০০ টাকা। পাকিস্তানি থ্রী-পিস মাত্র ৩০০ টাকা। বাংলানিউজের স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট জিএম মুজিবুর ছবি তুলতে ক্যামেরা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলতে নিষেধ করেন এই দুই হকার। নাম জানতে চাইলে নাম বলতেও অসম্মতি প্রকাশ করেন তারা।
এ সম্পর্কে ইপিবির উপ-সচিব মো. রোজউল করিম বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে আজ আমাদের একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর অভিযান পরিচালনা করার সময় রাস্তার ওপর কোনো দোকান দেখলেই তা তুলে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি দিয়ে মাল বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে হকাররা আর বসতে না পারে। যদি কেউ ধরা পরে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
** মার্কস পণ্য কিনে জিতে নিন এলইডি টিভি