ঢাকা: গ্রাহকের বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আরায়েস উদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) আইডিআরএ’র কার্যলয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কমিটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি বিমা গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিমা দাবি নিষ্পত্তিতে পদক্ষেপ নেবে। এক্ষেত্রে জীবন বিমা পলিসি গ্রাহকরা ২৫ হাজার বা তার বেশি বিমা দাবি নিয়ে কোম্পানির সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে কমিটির কাছে আবেদন করবেন। আর সাধারণ বিমা পলিসি গ্রাহকরা ৫ লাখ বা তার বেশি বিমা দাবি নিষ্পত্তিতে কমিটির কাছে আবেদন করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে বিমা গ্রাহককে বিমা দাবির ২ শতাংশ ফি দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ বিমা দাবির পরিমাণ ১০০ টাকা হলে গ্রাহককে ২ টাকা ফি দিয়ে দাবি নিষ্পত্তির আবেদন করতে হবে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নামে পে-অর্ডার অথবা ডিডি’র মাধ্যমে ফি জমা দিতে হবে।
গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি উভয় পক্ষকে (কোম্পানি ও গ্রাহক) শুনানিতে ডেকে বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। কমিটির আদেশে কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে আদেশের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আরায়েস উদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- সাধারণ বিমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. সোহরাব উদ্দিন, আইডিআরএ’র সদস্য মো. কুদ্দুস খান ও মাইক্রোফাইন্যান্স ইন্সটিটিউট’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ বাকী খলীলী।
বিমা আইন ২০১০’র ৭৩ ধারা এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি) প্রবিধামালা ২০১২ অনুযায়ী আইডিআরএ এ কমিটি গঠন করেছে।
অনুষ্ঠানে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, বিমা শিল্পের আধুনিকায়ন করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষে সরকার ১৯৩৮ সালের বিমা আইন রহিত করে, বিমা আইন-২০১০ ও বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ প্রবর্তন করেছে। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি আইডিআরএ কার্যক্রম শুরু করে।
আইডিআরএ গঠনের পর কর্তৃপক্ষ বিমা শিল্পের নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বিমা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিমা খাতে স্থিতিশীল অবস্থা আনতে আইডিআরএ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিমা আইন মেনে বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে গ্রাহকের বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি দিনকে বিমা দিবস করার চেষ্টা করবো। চলতি মাসের মধ্যে একটি অথবা দুটি তারিখ ঠিক করে সরকারের কাছে আবেদন করবো। তবে আমরা চাই ডিসেম্বর মাসের কোনো একটি দিনকে বিমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আরায়েস উদ্দিন বলেন, আমার ৪৬ বছরের বিচারক জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ করবো। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গণে আমি কখনো মাথা নত করে চলিনি। এখানেও আমি মাথা নত করে চলতে চাই না।
আইডিআরএ’র সদস্য কুদ্দুস খান বলেন, বিমা গ্রহকের স্বার্থ দেখা আমাদের দায়িত্ব। সরকারের অনুমোদন নিয়েই আমরা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জনসাধারণকে জানানো হবে। কমিটি বিরোধ নিষ্পত্তিতে কোর্টের মতো কষ্ট দেবে না। গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করবে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সহ-সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠনের ফলে আস্থার সংকট কেটে যাবে। তবে কমিটির উচিত হবে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শুনানিতে ডাকার আগে বিমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে আলোচনা করে নেওয়া। কারণ যেসব দাবি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় তার অধিকাংশ গ্রাহকের অসচেতনতার কারণে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিআইএ’র চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, আইডিআরএ’র সদস্য জুবের আহম্মেদ খান, সুলতান উল আবেদীন মোল্লা, মো. মোরশিদুল আলম, জীবন বিমার চেয়ারম্যান শামছুল আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫