বেনাপোল(যশোর): ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকাল টানা অবরোধের ১১ দিনে দেশের সর্ববৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে সরকার ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে পিছিয়ে পড়েছে।
একই কারণে এ বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি পণ্য খালাস নিতে না পারায় তাদের কমপক্ষে ১শ’ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পণ্য যেহেতু আমদানি হয়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ের ঘাটতি অবরোধ শেষে পুষিয়ে যাবে কিন্তু তাদের ঘাটতি পোষাবে কে? এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে অবরোধকারীদের কোনো বাধা না থাকায় শুরু থেকেই এ পথে স্বাভাবিকভাবে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে। কিন্তু বেনাপোলের বাইরে নাশকতার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে খুব একটা পণ্য খালাস নিতে পারছেন না। এতে পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় দেশে শিল্পকারখান উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাশাপাশি বন্দর গুদামে পণের ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে মারাত্বক পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে। স্থান সংকটের অভাবে ভারত থেকে আমদানি বাণিজ্যও কমে গেছে।
আগে প্রতিদিন যেখানে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ ট্রাক পণ্য ভারত থেকে আমদানি হতো এখন সেখানে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ ট্রাক পণ্য আসছে। বন্দরে আটকে থাকা পণ্যে নাশকতার আশঙ্কায় আতঙ্কেও রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রাক ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ট্রাক মালিকরা ভাড়ায় যেতে চাইছেন না। এতে ট্রাক সঙ্কটও চলছে। মিল কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে দ্বিগুণ খরচ বহন করে বন্দর থেকে কিছু পণ্য খালাস নেওয়া হচ্ছে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, হরতাল বা অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরে রাজনৈতিক সহিংসতার কবলে পড়ে ব্যবসায়ীরা মারাত্বক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছিল। আবারো ১১ দিনের টানা অবরোধে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিতে না পারায় ট্রাক ডেমারেজ, গোডাউন ভাড়া, ব্যাংক ঋণের বোঝা পরিশোধ করতে যেয়ে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১শ’ কোটি টাকার খেসারত গুণতে হবে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজি জানান, অবরোধের মধ্যে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালকেরা পণ্য পরিবহন করছে। একদিনের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে তিনদিন। এছাড়া রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ। এ সব কারণে ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা কমলে ভাড়া কমবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে দেশের ৭০ ভাগ ব্যবসায়ীরা এপথে পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু হরতাল, অবরোধ ও শ্রমিক আন্দোলনের কারণে গত ৩ বছর ধরে বন্দরে বাণিজ্যিক অবস্থা খুবই করুণ।
গত বছরে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বছরের শুরুতে আবারো একই সমস্যার কবলে পড়েছেন। টানা অবরোধে পণ্য খালাসে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্দরে পণ্যের স্তুপ জমে গেছে। ৩৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে সেখানে পণ্য রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এতে শিল্প কারখানার উৎপাদন কাজে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার দ্রুত এ অচলাবস্থা কাটিয়ে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন এমনটি প্রত্যাশা করেন তিনি।
বেনাপোল কাস্টমের যুগ্ম-কমিশনার আতিকুর রহমান বাংলানিজকে বলেন, অবরোধের কবলে পড়ে আমাদের রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগে সাধারণত প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতো। এখন সেখানে ৪ থেকে ৬ কোটি টাকা আদায় হচ্ছে। তবে অবরোধ উঠে গেলে এই ঘাটতি পূরণ হবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল জানান, অবরোধে এখানে ২০ দলের কোনো বাধা না থাকায় শুরু থেকে স্বাভাবিক ভাবে বাণিজ্য হচ্ছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে নাশকতার আশঙ্কায় বন্দর থেকে আমদানি পন্য খালাস হচ্ছে কম। যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে বন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫