খুলনা: লাগাতার অবরোধে উভয় সঙ্কটে পড়েছে খুলনার সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজারের আড়তদাররা। পরিবহন সঙ্কটের কারণে ৫ জানুয়ারির পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ কাঁচাবাজারে সরবরাহ কমে গেছে।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পরিচালিত এ কাঁচাবাজারের ১৫৮টি আড়তে কাঁচামাল সরবরাহ না থাকায় একদিকে যেমন বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে স্বাভাবিক ব্যবসা না হওয়ায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধেও চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে আড়তদারদের।
মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) সকালে কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম নাসির ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, টানা অবরোধে আমরা ব্যবসায়ীরা পড়েছি উভয় সঙ্কটে। অবরোধে পরিবহন ভাড়া দুই থেকে তিনগুণ বেশি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মাল আনতে হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবহন সঙ্কটের কারণে দাদন দেওয়া (অগ্রিম টাকা) কৃষক ও ব্যাপারীদের কাছ থেকে মাল আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য না চললেও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ রয়েছে বলে জানান তিনি।
আড়তদাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ পাইকারি কাঁচাবাজরে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ বাজারে প্রতিদিন শত শত ট্রাকসহ নছিমন-করিমন, ভটভটি ও ভ্যানযোগে কাঁচামাল সরবরাহ হতো। এতে দিনে প্রায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার মালামাল কেনাবেচা হতো।
তারা আরও জানান, একদিকে কৃষক তার ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি পরিবহন সংকটের কারণে বাজারে আনতে পারছেন না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও মালামাল কিনতে আসতে পারছেন না। পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে কিছু সবজি সরবরাহ হলেও, দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে, অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
এ বাজারে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর, ঢাকা, জামালপুর, সৈয়দপুর, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, নীলফামারীসহ ২৫ থেকে ৩০ জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালের আমদানি করা হয়। একই সঙ্গে খুলনা, বরিশালসহ প্রায় ৩০ জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে মালামাল কেনেন। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে তা আর হচ্ছে না। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। এর প্রভাবে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সবজি বাজারে আলুসহ শাক-সবজির বেচাকেনায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। অবরোধে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজারও শ্রমিক। আড়তদাররা তাদের দোকানে বসে অলস সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ সবজির পসরা সাজিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও ক্রেতা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই নামমাত্র দামে বিক্রি করছেন।
মধুমতি বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আবুল হোসেন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধের কারণে কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহণ অনেকটাই স্থবির ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে সাপ্লাই চেইন। ক্ষেত্র বিশেষ কিছু কিছু পরিবহন পুলিশ পাহারায় চলাচল করলেও, সেগুলোর ভাড়া ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
টানা অবরোধে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে রাজবাড়ী বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
তিনি জানান, এখানকার কাঁচাবাজারের যেসব পণ্য বিক্রি হয়, তার বড় একটি অংশ বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহী থেকে সরবরাহ করা হয়। অবরোধের কারণে সেসব এলাকার সরবরাহ কমে গেছে। দু-একটি ট্রাকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে কাঁচামাল আনা হলেও পাইকারি ব্যবসায়ী কম থাকায় অনেক মাল পঁচে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় : ১০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫