ঢাকা: এক হাজার ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন দুটি ও সংশোধিত চারটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে দেবে ৬৯৫ কোটি ৬২ লাখ
টাকা। আর প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে ৩৩৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।
ঢাকা ও নারায়ণঞ্জের মধ্যে নতুন ডুয়েলগেজ রেললাইন তৈরি হচ্ছে। বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনের সমান্তরালে সাড়ে একুশ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ডুয়েলগেজ লাইন তৈরি হবে।
এজন্য একনেক সভায় ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ নামক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে মোট ব্যয়ের মধ্যে ১২৯ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি ২৪৯ কোটি টাকা জাপান সরকার অনুদান হিসেবে দেবে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।
প্রকল্পটি অনুমোদনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ঢাকা ও
নারায়ণগঞ্জ উভয় শহরই অত্যন্ত জনবহুল। এখানকার যানজট সবসময়ই আমাদের মূল্যবান শ্রমঘণ্টা নষ্ট করছে। ডুয়েলগেজ রেললাইন তৈরি হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজতর এবং স্বল্প সময়ে হবে।
একনেক সভায় রেলের অপর একটি সংশোধিত প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধিত এ প্রকল্পটির নাম পাহাড়তলী ওয়ার্কসপ উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ১৪৬ কোটি টাকার হলেও মঙ্গলবারের সভায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ২১৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ১৩১ কোটি টাকা। বাকি ৮৭ কোটি টাকা জাপান সরকার অনুদান হিসেবে দেবে।
রেলওয়ের ক্যারেজ ও ওয়াগণ মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্কসপের প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণ করতেই সংশোধিত এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করবে বলে সভায় জানানো হয়।
একনেক সভায় জানানো হয়, ঢাকা শহরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাতে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি কলেজ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
রাজধানীর হাজারীবাগ, উত্তরা, রূপনগর, ডেমরা, কাফরুল, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, জুরাইন, মগবাজার ও কামরাঙ্গীরচরে এই ১১টি বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
অপরদিকে, সবুজবাগ, হাজারীবাগ, উত্তরা, কাফরুল, পল্লবী ও মোহাম্মদপুরে নির্মিত হচ্ছে কলেজগুলো ।
এগুলোর নির্মাণকাজও প্রায় শেষের দিকে। এ নির্মাণ কাজ যাতে আরো তাড়াতাড়ি শেষ হয় সেজন্য সভায় এ সংক্রান্ত একটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুমোদিত এ প্রকল্পের নাম ‘ঢাকা মহানগরীতে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৬টি মহাবিদ্যালয় (সরকারি) স্থাপন (২য় সংশোধিত)’।
২০১০ সালের একনেক সভায় এ প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদিত হয়। তখন এর ব্যয় ধরা হয় ৪৩৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সরকারি জমি পাওয়ায় প্রকল্প থেকে জমি কেনা বাবদ ২০৪ কোটি টাকা বাদ দিয়ে ২৩১ কোটি টাকায় ২০১৩ সালে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদিত হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত একাডেমিক ভবন চারতলা থেকে ছয়তলায় সম্প্রসারণ, শহীদ মিনার স্থাপন,পর্যাপ্ত আসবাবপত্র সরবরাহ ও আইটি ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলে প্রকল্প ব্যয় ৬৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে চূড়ান্তভাবে ২৯৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে তা অনুমোদিত হয়।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশোধিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগ, উত্তরা, কাফরুলে কলেজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবছর জুলাই থেকে মোহাম্মদপুরের কলেজের কার্যক্রমও শুরু হয়ে যাবে।
অপরদিকে হাজারীবাগ, উত্তরা, রূপনগর, ডেমরায় স্কুল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ মাস থেকেই কাফরুল, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও কামরাঙ্গীরচরে নির্মিত স্কুলগুলোতেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে হবে।
এদিকে, স্বল্পমূল্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে ‘স্বল্পমূল্যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ নামক আরো একটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২৮ কোটি টাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
একনেক সভায় ‘সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর-ধুনট সড়কে ৩টি পিসি গার্ডার ব্রিজ (শালুয়াঘাট, পাইকরতলি ও ঘোড়াচড়া) ও বিদ্যমান ৩টি বেইলি ব্রিজের সুপার স্ট্রাকচার (নইলসাপাড়া, ফকিরতলা ও সোনামুখী ) নির্মাণ (১ম সংশোধিত) ও কনস্ট্রাকশন অব লেবার টাওয়ার নামক অপর ৩টি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরাসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫