ঢাকা: ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমবিএ’র ছাত্রী দিনা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার প্রাণ-আরএফএল’র দুরন্ত ক্লাসিক স্টলে তিনি খণ্ডকালীন কাজ করছেন।
দিনা’র মতোই ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় প্যাভেলিয়ন ও স্টলে খণ্ডকালীন কাজ করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, বেকারসহ প্রায় সাড়ে সাত হাজার তরুণ-তরুণী।
দিনা বাংলানিউজকে বলেন, আমি এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েই এ কাজে যোগ দিয়েছি। পাবলিক প্লেসে কাজটি চ্যালেঞ্জের হলেও অভিজ্ঞতা নিতে এ কাজটি করছি।
তিনি জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি। ১৮ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে খাবার, নাস্তা ও পণ্য বিক্রিতে ইনসেনটিভ রয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে আর্কষণীয় পোশাক।
দিনা বলেন, বেতন আর ইনসেনটিভ দিয়ে ভালো শপিং হবে। আব্বু-আম্মুর কাছে হাত পাততে হবে না। কাজটি খুবই এনজয় করছি।
মেলা সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মাসব্যাপী এ মেলার প্যাভেলিয়ন ও স্টলে খণ্ডকালীন কমর্সংস্থানের সুযোগ হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার সুর্দশন তরুণ-তরুণীর।
এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অন্যরাও পাস করা বেকার তরুণ-তরুণী। গত মেলার চেয়ে এবার বেশি তরুণ-তরুণীর কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
লেখাপড়ার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ পেয়ে তারা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি তাদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।
মেলায় দেশি-বিদেশি মোট ৫১৬টি স্টল ও প্যাভেলিয়ন রয়েছে। প্রতি স্টলে গড়ে ১৫ জন হলে প্রায় সাড়ে সাত হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হলে এক মাসে সবার তাদের গড় উপাজর্ন দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ টাকা।
উন্নত দেশগুলোতেও শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের টিউশনি ছাড়া তেমন একটা সুযোগ থাকে না।
কাজের অভিজ্ঞতা আর স্বাবলম্বী হতে এ ধরনের সুযোগ বছরে একবার নয় সারা বছর থাকা উচিত বলে মনে করেন অনেক শিক্ষার্থী।
কেএন্ডআর স্টলে কাজ করছেন এ্যানি ত্রিপুরা। এ্যানি মিরপুর বাংলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রথমবারের মতো পাবলিক প্লেসে কাজ করছেন তিনি। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা আর্কষণীয় বেতন।
এ্যানি বাংলানিউজকে বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন। কারণ, অভিজ্ঞতা আর লিংক ছাড়া তো চাকরি হয় না।
তিনি বলেন, কাজ করার সুবাদে অনেক কোম্পানির সঙ্গেও পরিচয় হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি পেতে সমস্যা হবে না।
নিজে উপাজর্ন করার প্রশান্তি আলাদা বলেও মন্তব্য করেন এ্যানি।
কাজের সুযোগ আরও বেশি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে এ্যানি বলেন, অর্থনৈতিক যেকোনো কাজে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো উচিত। এতে বেকারত্ম কমে আসবে।
মাকর্স পণ্যের প্যাভেলিয়নে কাজ করছেন ২০ জন সুর্দশন তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে ইউল্যাবের ছাত্র মো. জাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, মেলার মতো সারা বছর খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ থাকলে দেশেরও উন্নয়ন হতো, আমাদেরও লাভ হতো।
গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে জিডিপি বেড়েছে ৬.২ শতাংশ হারে। এ ক্ষেত্রে এ মেলা বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে।
খণ্ডকালীন কর্মীদের মেলা শেষে কোম্পানিতে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ব্রার্দাস ফার্নিচারের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খালেদ সাইফুল্লাহ।
তিনি বলেন, প্যাভেলিয়নে সুযোগ পেয়েছেন ২০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাদের ১০ জনকে স্থায়ী করা হবে। এসব শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি লাভবান হবেন, আমরাও উপকৃত হবো।
খণ্ডকালীন কাজ করা এসব তরুণ-তরুণীর ব্যবহার, শ্রম ও মেধায় ক্রেতারা মুগ্ধ। মেলা ছাড়াও সব সময় এ ধরনের সুযোগ থাকা উচিৎ বলেও মনে করেন সাইফুল্লাহ।
কয়েকটি প্যাভেলিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইফাদ ফুড লিমিটেডের প্যাভিলিয়নে ৪০ জন তরুণ-তরুণীর খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পোলার আইসক্রিম মিনি প্যাভেলিয়নের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের স্টলে কাজের সুযোগ পেয়েছেন ১০ জন তরুণ-তরুণী।
এছাড়া মাকর্স’র তিনটি চা স্টলে মোট ৭০ জন, সনি র্যাংকস’র বড় প্যাভেলিয়নে ৪০ জন, শরীফ মেলামাইনে ২৭ জন কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন বলে দায়িত্বররা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, খণ্ডকালীন হলেও এটা শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বড় সুযোগ। ছোট-বড় স্টলে গড়ে ১৫ জন করে তরুণ-তরুণী কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সুদুরপ্রসারী চিন্তা করে এগোলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এটি একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করবে। তবে সেটা একদিননে সম্ভব নয়। অনেক সময়ের প্রয়োজন। এজন্য সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকেও উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫
** মেয়েদের পছন্দের তালিকায় হং কং পুথির নেকলেস
** লোকসান থেকে পরিত্রাণ চান ব্যবসায়ীরা