ঢাকা: দেশের চলমান অস্থিতিশীল অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলতে পোশাক শ্রমিকদের ব্যবহার করা হতে পারে বলে শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কোর কমিটির সভায় তারা এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।
সূত্র জানায়, বৈঠকে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাই ছিলেন। সকলেই জানিয়েছেন, সম্প্রতি দেশব্যাপী চলমান সহিংসতার সংক্রামণ হতে পারে পোশাক খাতেও।
গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থাপন করা তথ্যে বলা হয়েছে, আশুলিয়া, টঙ্গী এবং নারায়ণগঞ্জে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে গার্মেন্টসগুলো। পোশাক শ্রমিকরা সকালে, দুপুরের খাবারের সময় এবং বের হওয়ার সময় একত্রিত হয়ে চলে। এই সংঘবদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী হতে করতে পারে নাশকতাকারীরা।
মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, আশুলিয়াতে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ টি গার্মেন্টস রয়েছে। গত ২০১৪ সালে ১৫৭টি গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায় এবং সেগুলো থেকে শ্রমিক ছাটাই করা হয়। এই ১৫৭টি গার্মেন্টসের চাকুরিচ্যুত শ্রমিকদের ব্যবহার করা হতে পারে বলে ধারণা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। শিগগিরই মন্ত্রণালয়কে গার্মেন্টসগুলোর নাম দেওয়া হবে।
গোয়েন্দা সংস্থা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, অবরোধের কারণে গার্মেন্টসগুলোতে অর্ডার কমে গেছে। বায়াররা অর্ডার দিচ্ছেনও কম করে। ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না তারা। অর্ডার কমে যাওয়াতে শ্রমিক ছাটাই হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। আর এখান থেকেও শ্রমিক অসন্তুষ্টি এবং সেটাকে কাজে লাগিয়ে নাশকতাকারীরা বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি শ্রমিকদের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন ও পুরাতন শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে, এই ধোঁয়া তুলেও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হতে পারে।
বেশ কিছু গার্মেন্টসে, বিশেষ করে সুয়েটার ফ্যাক্টরিগুলোতে অটোমেটিক মেশিন আনা হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর পুরুষ শ্রমিক ছাটাই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে এসব নিয়ে এখনই গুঞ্জন চলছে। এসব মেশিন আসলে ছাটাই হওয়ার সম্ভাবনায় থাকায় শ্রমিকরা অবরোধকারীদের দ্বারা প্ররোচিত হতে পারে বলে তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
যদিও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি হয়েছে, তারপরও সরকারি কর্মকর্তাদের পে-কমিশনের বিষয়টি শ্রমিকদের মাথায় দিয়ে উত্তেজিত করে তোলা হতে পারে তাদের। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তুষ্টি জ্বলতে পারে বলে ধারণা করেন তারা।
সম্প্রতি রাজধানীসহ এর আশপাশের এলাকায় সর্বনিম্ন মজুরি ১০৫ ডলার দাবি করে পোষ্টার করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়কে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে একজন শ্রমিক নেত্রী লিমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, ৯টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। যারা আমেরিকা থেকে সরাসরি অনুদান পান। এসব সংগঠনের প্রথম দু’এক জন ছাড়া বেশিরভাগ বিএনপি করে। এসব সংগঠনের আর্থিক অনুদান এবং খরচের বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের কোনো দুর্ঘটনায় কিছু শ্রমিক সংগঠন এমনভাবে প্রতিক্রিয়া করে, যেনো কারখানা ধ্বংস করাই তাদের উদ্দেশ্য। এসব ফেডারেশন বা ইউনিয়নের অনেকেরই নেই কোনো সাংগঠনিক বৈধতার কাগজপত্র।
আবার অনেক সংগঠন দেশে বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও বিদেশের সঙ্গে সর্ম্পক রেখে মালিকদের নোটিশ পাঠাচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিক সংগঠনের নামে আর কাউকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রতিমন্ত্রী।
গার্মেন্টস মালিকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না। তাই শ্রমিকদের ছাঁটাই যেনো করা না হয়। বেতন সময়মতো দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত গার্মেন্টস মালিকদের প্রতিনিধি বলেন, ফেব্রুয়ারির ৫ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময়টি বেতন প্রদানের। এ সময়টিতে আমাদের সকলকেই বেশি সচেতন থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫