ঢাকা: মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বিনিয়োগ বান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেস রুমে গভর্নর ড. আতিউর রহমান চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) দ্বিতীয়ার্ধের এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।
মুদ্রানীতিতে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হবে। শ্রেণিকৃত ঋণ ও বৃহৎ ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহজ সুবিধা থাকবে। এ লক্ষ্যে মুদ্রানীতি ঘোষণার দুই দিন আগে ঋণ পুর্নগঠন নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ পুনর্গঠনের নীতিমালর আওতায় ব্যবসায়ীরা ৫’শ কোটি টাকার উপরের বকেয়া (খেলাপী) ঋণ পুনর্গঠনে ১২ বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। একক অথবা গ্রুপভূক্ত উভয় শ্রেণির ঋণ গ্রহীতারা এ সুযোগ পাবেন। বকেয়া ঋণের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার মধ্যে হলে গ্রাহককে দুই শতাংশ এবং এক হাজার কোটি টাকার উপরে হলে এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঋণ সরবরাহ ও ঋণ আদায়ে ব্যাংক সংকটের মুখে পড়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। এরই অংশ হিসেবে বকেয়া ঋণ পুর্নগঠনে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ ও আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে কারছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এবারের মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যাংক খাতসহ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মুদ্রানীতিতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এবারের অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি হবে বিনিয়োগ বান্ধব।
তিনি বলেন, সহিংসতা ও অস্থিরতার কারণে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের এ সাময়িক ক্ষয়ক্ষতি যাতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রটি জানায়, মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি, ব্যাপক মুদ্রার জোগান স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি শেয়ারবাজারের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠার বিষয়টিও মুদ্রানীতি ঘোষণায় বিবেচনায় রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের জন্য সরাসরি কোনো বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করা না হলেও পরোক্ষভাবে যাতে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সেদিকে নজর দেওয়া হবে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবলয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জমান বাংলানিউজকে বলেন, এবারের মুদ্রানীতি হবে বিনিয়োগ বান্ধব। বিনিয়োগকে অধিকমাত্রাই আকর্ষণ করতে মুদ্রানীতি কাজে লাগোনো হবে। পাশাপাশি সাধারণের কাছে ব্যাংকিং সেবা নিয়ে যেতে মুদ্রানীতিতে নজর দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মুদ্রানীতিতে জনগণের মৌলিক চাহিদা যাতে বজায় থাকে সেদিকেও নজর দেওয়া হবে। এজন্য মুদ্রানীতির ফলে যাতে দ্রব্যমূল্যের দাম না বাড়ে সেদিকটি বিবেচনায় রাখা হবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম অর্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয় গত বছরের ২৬ জুলাই। সে সময় অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ আড়াই শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ঘোষিত মুদ্রানীতিকে বিনিয়োগ বান্ধব বলে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই মুদ্রানীতিতে অর্থবছর জুড়ে মুদ্রা সরবরাহ আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়। বার্ষিক হিসাবে বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান ধরা হয় ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৪ শতাংশ। তবে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণ ধরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫