ঢাকা: অবরোধে আবাসন খাতে প্রতিদিন প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অবরোধের ২৩ দিনে (৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি) এ সেক্টরে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭৯২ কোটি টাকা।
বুধবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
‘জীবন ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার’ দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
চলমান সংকটে আবাসন খাতের সঙ্গে জড়িত দুই শতাধিক লিংকেজ শিল্পও ক্ষতির কবলে পড়ছে। সব দলকে অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, রিহ্যাব ১২০০ সদস্যের একটি বিরাট সংগঠন। জিডিপিতে এর অবস্থান দ্বিতীয়।
অবরোধের কারণে বিশাল অর্থনৈতিক যোগানদানকারী এ প্রতিষ্ঠানে প্রতি সদস্যের দৈনিক ক্ষতি গড়ে তিন লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিদিন আবাসন খাতে গড় ক্ষতি ৩৬ কোটি টাকা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে এ খাতে প্রায় ৭৯২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। রাজনীতির নামে এভাবে সহিংসতা চলতে থাকলে ফ্ল্যাট’র দাম ও ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দেশের সব ব্যবসায়ীদের মতো আমরাও সহিংসতার বিরোধী। ২৫ বছর ধরে এফবিসিসিআই’র সঙ্গে তারাও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদ করে আসছে।
আবাসন খাত আবারও মন্দার কবলে পড়ছে জানিয়ে লিয়াকত বলেন, দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে গত মাসে আবাসন খাত কিছুটা সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সহিংস রাজনীতির কারণে ক্রেতারা কোনো বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। হরতাল-অবরোধের সঙ্গে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো সহিংস পরিস্থিতির কারণে ক্রয়-বিক্রয়, মূল্য আদায়, লেনদেন সর্বনিন্ম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
লিয়াকত আলী বলেন, হরতাল-অবরোধে আবাসন ব্যবসায়ীরা নির্মাণ সামগ্রী আনতে না পারায় বৃদ্ধি পাচ্ছে নির্মাণ ব্যয়। এতে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি ও চুক্তির শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়ে আবাসন ব্যবসায়ীরা আইনগত জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলে নতুন করে এ খাত আবারও সংকটে পতিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ খাতের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ব্যাংক ঋণের জালে আটকা পড়ছেন জানিয়ে রিহ্যাবের এ নেতা বলেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী উভয়েই বেকায়দায় পড়েছেন। পরিস্থিতি উন্নতি না হলে কখনো এ ঋণ শোধ করতে পারবেন না তারা।
পরিস্থিতি বিবেচনায় এ খাতকে বাঁচাতে সুদ মওকুফসহ ব্যাংক ঋণ দুই বছরের জন্য পুণঃতফসিল করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।
কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায়িরা ঋণ খেলাপি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন। স্বল্প ও মধ্য আয়ের জনসাধারণের জন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদে রি-ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহারের দাবি জানিয়ে লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, আমরা রাজনীতি বুঝি না আমরা বুঝি ব্যবসা। আর বুঝি কিভাবে এর মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
তাই অর্থনীতির চরম হুমকির মুখে আমরা এ সহিংসতাকে সমর্থন করতে পারি না। রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতা পরিহার ও প্রতিবাদের ভাষা পরিবর্তনের দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রবিউল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী সরদার মো. আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫