ঢাকা: আরও নতুন বিমা কোম্পানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে দুটি কোম্পানিকে অনুমোদন দিতে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
এরমধ্যে এলআইসি অব বাংলাদেশ কোম্পানিটিতে বাংলাদেশ থেকে পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্স এবং বিদেশি অংশে রয়েছে ভারতের লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এলআইসি)। আর তাইও সামিট লাইফে বাংলাদেশ থেকে সামিট গ্রুপ এবং বিদেশি অংশে আছে জাপানের তাইও লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
কোম্পানি দুটিকে বিমা ব্যবসার অনুমোদন দিতে আইডিআরএ’র কাছে করা সুপারিশে অর্থমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘তাইও এবং এলআইসি ভালো কোম্পানি। এরা আসলে ভাল হয়। পরামর্শ চাই। ’
অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব এস এম জাকারিয়া হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিটি গত ১২ জানুয়ারি আইডআরএ’র কাছে পাঠানো হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব’র চিঠির সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা মন্তব্যটি এবং অর্থমন্ত্রীর কাছে তাইও সামিট লাইফের করা একটি আবেদন জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জানুয়ারি আইডআরএ’র চেয়রম্যান এম শেফাক আহমেদ অর্থমন্ত্রীকে জানান, জাপানের তাইও এবং ভারতের এলআইসি স্বনামধন্য কোম্পানি। এ ধরনের কোম্পানি বাংলাদেশে বিমা ব্যবসায় যোগ দিলে দেশের বিমা শিল্পের উন্নতি হবে।
তবে কোম্পানি দুটিকে আইন ও বিমা ব্যবসার সনদ পেতে করা আবেদনের শর্ত মানার জন্য সুপারিশ করেন তিনি।
এদিকে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাইও সামিট লাইফকে নিবন্ধন সনদ দিতে সম্মতি জানায় আইডিআরএ। কিন্তু পরবর্তীতে নিবন্ধন সনদ’র জন্য করা আবেদন পত্রে উল্লেখিত উদ্যোক্তাদের শেয়ারের অংশ পরিবর্তন করায় প্রতিষ্ঠানটিকে নিবন্ধন সনদ দেয়নি আইডিআরএ।
আর আইন মেনে আবেদন না করায় এলআইসি অব ইন্ডিয়ার প্রস্তাব প্রাথমিক বাছাই থেকেই বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে অর্থমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে কোম্পানি দুটিকে নতুন করে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ। এ দুটি কোম্পানির সঙ্গে আরও এক বা একাধিক কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
তাইও সামিট লাইফের বিষয়ে গত ২৬ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আইডিআরএ’র চেয়রম্যান বলেন, তাইও সামিট লাইফ ২০১৩ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি পরিশোধিত মূলধন ও ৩৫০ কোটি টাকার অথরাইজড মূলধন নিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। এই আবেদনে প্রস্তাবিত মূলধনের উদ্যোক্তাদের অংশের ৫৭ শতাংশ তাইও লাইফ গ্রহণের প্রস্তাব করে। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির সুনামের কথা চিন্তা করে নিবন্ধন সনদ প্রদানে সম্মতি দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর উদ্যোক্তাদের মূলধন ১৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা এবং তাইও লাইফের অংশ ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। যা মূল আবেদনের প্রস্তাবের সঙ্গে অনেক ব্যবধান। ফলে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে মূল প্রস্তাব অনুসারে নিবন্ধন সনদ গ্রহণের জন্য কোম্পানিটিকে অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে কোম্পানিটিকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হলেও তারা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
চিঠিতে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান আরও বলেন, মন্ত্রী মহোদয়’র কাছে আবেদন করায় তাইও লাইফের সুনামের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি (নিবন্ধন সনদ দেওয়া) আইডিআরএ সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে পারে। প্রস্তাবিত পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৮ কোটি করার প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে।
তবে মূলধনে উদ্যেক্তা অংশের ১৮ কোটি টাকায় তাইও লাইফের অংশগ্রহণ পূর্বের প্রস্তাব মত ৫৭ শতাংশ থাকতে হবে। একই সঙ্গে তাইও লাইফকে মানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পসমূহ যথাযথ কারিগরি কৌশলসহ (Technical know how) বাংলাদেশে চালু করতে হবে।
এলআইসি’র বিষয়ে চিঠিতে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রীকে বলেন, এলআইসি অব ইন্ডিয়া স্থানীয় একটি বিমা কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ‘এলআইসি অব বাংলাদেশ’ নামে একটি কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। প্রস্তাবিত এ কোম্পানির মূলধনের উদ্যোক্তাংশে এলআইসি অব ইন্ডিয়ার অংশ রাখা হয় ৯০ শতাংশ। কিন্তু আইন অনুযায়ী এ পরিমাণ সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ হতে পারে। এছাড়াও আবেদনটি অসম্পূর্ণ থকায় গৃহীত হয়নি।
তবে এলআইসি অব ইন্ডিয়া ভারতের এক নম্বর কোম্পানি উল্লেখ করে ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, জীবন বিমা ব্যবসায় কোম্পানিটির জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, কৌশল ও ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানের। প্রতিষ্ঠানটি যদি তাদের কারিগরি কৌশল এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল বাংলাদেশে স্থানান্তর করে তাহলে দেশের বিমা শিল্প নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে।
যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানির নিবন্ধন পেতে করা আবেদনে অন্য কোম্পানির মতো তাইও সামিট লাইফের উদ্যোক্তারা হলফনামা প্রদান করে প্রস্তাবিত কোম্পানিতে তাদের ধারণ করা শেয়ার ৩ বছরের মধ্যে হস্তান্তর কারতে পারবেন না।
কিন্তু পরবর্তীতে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার সম্মতি দেওয়া হলে প্রায় এক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি উদ্যোক্তাদের শেয়ার পরিবর্তনের আবেদন করে। যে কারণে তাদের নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়নি। তবে আবেদন পত্রে উল্লেখিত প্রস্তাব মত তাইও লাইফ উদ্যোক্তাদের অংশের ৫৭ শতাংশ গ্রহণ করলে প্রতিষ্ঠানটিকে সনদ দেওয়া হবে।
এলআইসি অব বাংলাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী যৌথ বিমা কোম্পানিতে বিদেশি কোম্পানি সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবে। কিন্তু এলআইসি প্রথমে এ আইন মেনে আবেদন করেনি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আপিল করে। সে সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না।
আইডিআরএ’র দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাবৃন্দ সে সময় আপিলটি বিবেচনা করেনি। এখন আইন মেনে এলআইসি অব ইন্ডিয়া প্রস্তাবিত কোম্পানির সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করলে আবেদনটি বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫