ঢাকা: সময়টা ছিলো ৮০’র দশক। রমরমা পোশাক শিল্পের ব্যবসা ছিলো শ্রীলংকায়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সহিংসতা চলছে। পুড়ছে মানুষ। প্রাণ হারাচ্ছে জনগণ। ঠিক একই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিলো শ্রীলংকায় ৮০’র দশকে। ফলাফলে ক্রেতারা অনিশ্চয়তার মুখে তখন বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিযোগী দেশসমূহের কাছে অর্ডার তুলে দিয়েছিলো।
বর্তমান চলমান সহিংসতায় জানুয়ারি মাসে ক্রেতাদের বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও তারা আসতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতারা অন্যদেশে অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে। একবার অর্ডার অন্য দেশে চলে গেলে তা ফিরিয়ে আনা কষ্টকর হবে। এ অবস্থা শ্রীলংকার পথেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প চলে গেলে কারোরই কিছু করার থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি মাসে যেখানে নতুন অর্ডার আসার কথা ছিলো সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন অর্ডার তো আশানুরূপ আসেনি বরং পুরানো অর্ডারের মধ্যে ৩৮ লাখ ডলার মূল্যের অর্ডার বাতিল হয়েছে এমবি নিট ফ্যাশনের।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ক্যাশিও ও কেইলার নামক দুটি ক্রেতা রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্ডার সাপ্লাই দিতে পারবো কিনা সন্দেহে প্রায় ৩৮ লাখ ডলার মূল্যের অর্ডার বাতিল করেছে। বর্তমানে তাদের কর্মী সংখ্যা প্রায় ৮শ’। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতো তাহলে যে পরিমাণ অর্ডার আসতো তাতে তারা আরও প্রায় ৮শ’ নতুন শ্রমিককে চাকরি দিতে পারতেন।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই মূলত পুরো বছরের পোশাক রফতানির অর্ডার আসে বাংলাদেশে। আর প্রায় পুরো মাস ধরে চলমান অবরোধে ৪০ শতাংশ অর্ডার কম এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ হাতেম।
এমন অবস্থা লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ বলে জানান পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ এর নেতৃবৃন্দ।
বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি (অর্থ) রিয়াজ-বিন-মাহমুদ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, অর্ডার পাওয়ার এই সময় হরতাল অবরোধে তেমন কোনো ক্রেতাই বাংলাদেশে আসতে পারেনি এটা সত্যি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আশানুরূপ অর্ডার পেত বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। এতে করে পোশাক রফতানির ২৭ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিলো তার থেকে অনেক বেশি আমরা অর্জন করতে পারতাম।
বিজিএমইএ এর এই নেতা আরও বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আমরা ঠিক মতো অর্ডার সাপ্লাই দিতে পারবো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। যে পরিমাণ অর্ডার একজন ক্রেতা স্বাভাবিক অবস্থায় দিতেন তার থেকে কম পক্ষে ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ কম দিচ্ছেন। ফলে নতুন যে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতো তা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
এই অবস্থা চলমান থাকলে একদিন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পও শ্রীলংকার মতো ইতিহাসেই স্থান পাবে বলে মনে করেন রিয়াজ-বিন-মাহমুদ সমুন।
৮০’র দশকের শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশে ক্রেতারা আসাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। ‘যারা জিন্সের’ সঙ্গে জার্মানির ক্রেতা আলডির বৈঠকের কথা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে। কার্যাদেশ চাইলে যারা জিন্সের প্রতিনিধি দলকে জার্মানি যেতে হবে বলে সাফ জানিয়েছে আলডির কর্মকর্তারা বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান রানা।
বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একদিনের হরতালে ৬৯৫ কোটি টাকার রফতানির পন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে পোশাক শিল্পের উৎপাদন হরতাল বা অবরোধের একদিনে ব্যাহত হয় ২১৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থায় যাচ্ছে। তবে ২০১৪ সালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পোশাক শিল্প। কিন্তু ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারণে ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বলে দাবি করেছন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫