ঢাকা: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নিটওয়্যার পণ্যের রুলস অব অরিজিনে ছাড় দেবে জাপান।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৃহস্পতিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যোগ দিতে প্রায় ২৪ ঘণ্টার ঢাকা সফরে এসেছেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী (সচিব পদমর্যাদা) শিনসুকে সুগিয়ামা।
জাপানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রতিনিধি দলে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তারাও ছিলেন। আর পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।
ঢাকা সফরকালে সিনসুকে সুগিয়ামা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বি-পক্ষীয় ইস্যুগুলোতে আলোচনা হয়। সেখানে তৈরি পোশাক শিল্পের নিটওয়্যার পণ্যের রুলস অব অরিজিনে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা শিথিল করা হবে।
এজন্য জাপানের তৈরি পোশাক আমদানির বিদ্যমান নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেটি সংশোধন করা হলে রুলস অব অরিজিনে শিথিলতার সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরের সময়ে নিটওয়্যার পণ্যে জিএসপি রুলস অব আরিজিন নিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। এ বিষয়ে জাপান সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাংলাদেশের জন্য নিটওয়্যার পণ্যে জিএসপি রুলস অব আরিজিন শিথিল করা হবে।
‘তা কিভাবে করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে’—যোগ করেন তিনি।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই জাপানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে জাপানের প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ডলারের পাঁচটি প্রকল্পে বাংলাদেশ তার নিজ অংশের সমীক্ষা শেষ করতে পারেনি।
তিনি জানান, বাংলাদেশ তার নিজস্ব সমীক্ষা শেষ করলে পরবর্তীতে জাপান যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ফলে বাংলাদেশ এ বৈঠকে শুধুমাত্র রুলস অব অরিজিনে শিথিলতার প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই পায়নি।
এর কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রকল্পগুলোর যাবতীয় কাজ শেষ করে হালনাগাদ তথ্য দেবার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তা সময় মতো শেষ করতে পারেনি।
এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং ভিসা অব্যাহতি নিয়ে চুক্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
তবে আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে দাবি করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি বাংলাদেশ ও জাপানের প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। ভালো আলোচনার কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বৈঠক দীর্ঘায়িত হয়েছে।
‘বৈঠকে দ্বি-পক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। দুই পক্ষই সহসাই আবারও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে একমত হয়েছে। ’—বলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
এ অঞ্চলে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপান ও বাংলাদেশ কিভাবে একসাথে কাজ করতে পারে তাও আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
এ সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের মতে এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মো. শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বি-পক্ষীয় সফরের পর যে যৌথ বিবৃতিতে পাঁচটি বড় প্রকল্পের বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছিল তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক এবং কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে রাজি নয় জাপান।
গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের অর্থায়নে ভারতের ইতিবাচক মতামত খুঁজছে জাপান। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল একটি রেল সেতু তৈরিতে সহজ শর্তে ঋণ বা ওডিএ দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে দেশটি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫