খুলনা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে খুলনায় পরিবহন খাতে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে যেমন পরিবহন মালিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে এসব পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত চালক ও হেলপারদের আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
পরিবহন মালিকদের সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, খুলনা অঞ্চলে চলমান হরতাল-অবরোধে বাস ও ট্রাকসহ ছোট-বড় অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। বেশকিছু গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, সাধারণ সময়ে খুলনা অঞ্চলে পণ্যবাহী ৫ হাজার ট্রাক চলাচল করে। বর্তমানে হরতাল-অবরোধে মাত্র শতাধিক ট্রাক চলাচল করছে। হরতাল-অবরোধকারীদের হাতে বিভিন্ন স্থানে ৭-৮টি ট্রাক ভাঙচুর হয়েছে। অনেক ট্রাকের সবজি, চাল, কয়লা অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে। ককটেল নিক্ষেপে ৪-৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
এছাড়া খুলনা থেকে প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে ২ হাজার বাস-মিনিবাস, কোচ চলাচল করতো। কিন্তু হরতাল-অবরোধে ৩শ’ গাড়িও চলছে না বলে জানান পরিবহন মালিকরা।
পরিবহন মালিক জানান, টানা অবরোধে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। কিছু যাত্রীবাহী বাস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর প্রহরায় চললেও, তা ৫-১০ শতাংশের বেশি নয়। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরিবহন মালিকদের অচিরেই পথে বসতে হবে বলেও জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনাডাঙ্গা বিভাগীয় বাস টার্মিনাল এলাকার এক পরিবহন মালিক বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। প্রতিদিন টাকা দিয়ে গাড়ি পাহারা দিতে হচ্ছে। দিন-রাত থাকতে হচ্ছে আতঙ্কে, কখন কি হয়!
তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধকারীদের হাতে একটি বাস-কোচের সামনের গ্লাস ভেঙে গেলে ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। আর জ্বালিয়ে দিলে গাড়ির বডি, সিট, চাকা, ইঞ্জিনসহ সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায়। আর এর ক্ষতিপূরণ কেবলমাত্র মালিককেই বহন করতে হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সুন্দরবন পরিবহনের চালক আতিকুর রহমান জানান, পেট্রোল বোমার ভয়ে তার পরিবার তাকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। ধার-দেনা করে এতোদিন সংসার চালিয়েছেন। এখন আর কেউ ধারও দিতে চায় না।
আতিকুর বলেন, প্রতিটি গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা চরম অর্থ সংকটে ভুগছেন। অনেকের চুলায় আগুন জ্বলছে না। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
পূর্ব রূপসা বাস টার্মিনালের একটি বাসের হেলপার শহীদুল বলেন, খালেদা জিয়া একের পর এক হরতাল-অবরোধ দিয়ে তাদের মতো গরিব মানুষদের কষ্ট দিচ্ছেন। নেতারা কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গরিব মানুষদের কষ্ট দেয়। তাদের তো আর খাবার-দাবারের কষ্ট নেই। তাই তারা হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে।
খুলনা রয়েল মোড়ের হানিফ এন্টারপ্রাইজ কাউন্টারের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম লিটন বলেন, জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে প্রশাসন, মালিক ও শ্রমিক সমিতির ত্রি-পক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত মতে কিছু গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ছে। তবে হরতাল অবরোধে যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। গাড়ি নিয়ে বের হলে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বক্স দুদু বাংলানিউজকে জানান, খুলনায় স্বাভাবিক অবস্থায় ৫ হাজার ট্রাক চলাচল করতো। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে শতাধিক ট্রাক চলছে। বিভিন্ন স্থানে ৭-৮টি ট্রাক ভাঙচুর হয়েছে।
তিনি জানান, চলমান হরতাল অবরোধে খুলনায় ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিদিন গড়ে ১ কোটির অধিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
খুলনা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বাংলানিউজকে জানান, খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে ২ হাজারেরও অধিক বাস-মিনিবাস চলাচল করতো। আর এসব পরিবহনে ২০ হাজারেরও বেশি চালক, হেলপার ও শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে টানা হরতাল-অবরোধে এসব শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, খুলনা-ঢাকা রুটে দিনে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও, পুলিশি নিরাপত্তায় রাতে কিছু বাস চলাচল করছে। এসব পরিবহনও ককটেল হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এতে চালক ও যাত্রীরা আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালকরা যেমন গাড়ি চালাতে নারাজ, তেমনি মালিকরাও আগুনের হাত থেকে যানবাহন বাঁচাতে গাড়ি টার্মিনালেই রেখে দিচ্ছেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলী জোটকে জনগণের কথা চিন্তা করে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিও জনান আনোয়ার হোসেন সোনা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫