রাজশাহী: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল অবরোধে রাজশাহীতে ধ্বংসের মুখে পড়েছে পোল্ট্রি খামার। লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে এ ব্যবসা।
যানবাহনের কারণে রাজধানী ঢাকা-সাভারসহ অন্য অঞ্চল থেকে খাদ্য আনতে পারছেন না রাজশাহীর পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে রাজশাহীর বাইরেও পাঠানো যাচ্ছে না উৎপাদিত ডিম। ফলে একদিকে খাদ্য সঙ্কট, অন্যদিকে অবিক্রিত ডিম নিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রায় দুই হাজার খামারি।
লোকসান টানতে গিয়ে ডিম উৎপাদনকারী (লেয়ার) খামারিদের অনেকেই এরই মধ্যে পথে বসেছেন।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, শিগগিরই এ অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অচিরেই সম্ভাবনাময় শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে এর সঙ্গে জড়িত রাজশাহীর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।
রাজশাহী পোল্ট্রি শিল্প অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দুই বছর আগেও রাজশাহীতে চার হাজারের মতো ছোট-বড় ব্রয়লার মুরগির খামার ছিল। নানা কারণে বর্তমানে তা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দফায় দফায় লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এসব খামারি ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় নিজেদের ব্যবসা নিয়ে টিকে ছিলেন।
কিন্তু চলমান অবরোধ-হরতালে আবারো লোকসানের মুখে পড়েছেন খামারিরা।
মহানগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার লেয়ার খামারি আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের সূত্রপাত অবরোধের আগ থেকেই। বেশ কিছুদিন থেকেই ব্রয়লার মুরগির কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাচ্ছিলো না। মুরগি ও ডিমের বাজারমূল্য কম থাকায় খামারিদের যখন লোকসান গুণতে হচ্ছে, তখন গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি।
তিনি জানান, মাসজুড়ে টানা অবরোধের মধ্যে হরতাল লেগেই আছে। কখনও কেন্দ্রীয়ভাবে আবার কখনও আঞ্চলিক হরতালের কবলে পড়ছে রাজশাহী। নাশকতা বেশি হচ্ছে রাজশাহীতেই। এসব কর্মসূচিতে তারা মূলত দুইটি সমস্যায় পড়েছেন। এক হচ্ছে খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না।
অপরদিকে খাওয়ার ও ওষুধ জেলার বাইরে থেকে খামারে আনতে পারছেন না।
মহানগরীর কাদিরগঞ্জ গ্রেটার রোড এলাকার আদর্শ পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিডের মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর বাইরে ডিম পাঠানোর পাশাপাশি খামারগুলো এখন খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা, সাভার, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে মুরগির খাওয়ার আনতে হয় তাদের। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে তারা মুরগির খাবার আনতে পারছেন না।
বাজারে এখন লেয়ার মুরগির জন্য ৫০ কেজির প্রতি বস্তা খাদ্যের দাম এক হাজার ৮০০ টাকা এবং মাংস উৎপাদনকারী মুরগির খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি দুই হাজার ৩০০ টাকা। পোল্ট্রি ফিডের দামের সমস্যা না হলেও খাবার না পাওয়াটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে মহানগরীর বিভিন্ন মুরগির খামারে বর্তমানে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সঙ্কট।
এদিকে, মহানগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকার পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী রায়হান আলী জানান, তিন হাজার লেয়ার মুরগি নিয়ে একটি খামার আছে তার। প্রতিদিন ওই খামার থেকে গড়ে দুই হাজার ডিম উৎপাদন হয়। পরিবহন সঙ্কটের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে খামারের উৎপাদিত ডিম বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেননি তিনি। এতে খামারে অবিক্রিত প্রায় ১৫ হাজার ডিম জমেছে। ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত খামারে ডিম সংরক্ষণ করা যায়। তাই অবরোধ প্রত্যাহার না হলে তার অনেক বড় লোকসান গুণতে হবে।
রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোশিয়ানের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, অবরোধের কারণে রাজশাহীর পোল্ট্রি শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। এমনিতেই ব্যবসা খারাপ যাচ্ছিলো। এর মধ্যে অবরোধ-হরতালে ব্যবসা লাটে উঠেছে। চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রাজশাহী অঞ্চলের পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই হাজার খামারির জীবন-জীবিকায় অনামিশার অন্ধকার নেমে আসবে। এজন্য দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানান পোল্ট্রি খামারিদের এই নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫