সিলেট: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালের কবলে পড়ে সিলেটে পর্যটন শিল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ এক লীলাভূমি সিলেট।
হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারতে এবং প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হতে প্রতিনিয়ত এ অঞ্চলে ভিড় করেন পর্যটকরা। প্রতিবছর শীতের এ মৌসুমে সিলেটের হোটেল, মোটেল, রেস্তোরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে থাকে চাঙ্গাভাব। এখান থেকে সরকার যেমন মুনাফা পায় তেমনি ব্যবসায়ীরাও হন লাভবান।
কিন্তু টানা এক মাসের অবরোধে পর্যটক শূন্য সিলেট। পরিবার-পরিজন বৈকি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঢু-মারছেন না সিলেটে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মৌসুমে সিলেটের জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, গোয়াইনঘাটের পান্থুমাই, সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড, লাইয়াছড়া, হামহাম জলপ্রপাত কিংবা সিলেটের হাকালুকি ও সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা।
কিন্তু ২০ দলের ডাকা অবরোধের এক মাসে এসব এলাকায় ছিল না পর্যটকদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে সিলেটের অভিজাত হোটেলগুলোতেও হাহাকার। পর্যটক শূন্যতায় ভুগছে সিলেটের অভিজাত হোটেল রোজভিউ, নির্ভানা ইন, স্টার প্যাসিফিক, লা-রোজ, ফরচুন গার্ডেন, হোটেল পলাশ ও সুপ্রীমসহ ছোটবড় আবাসিক হোটেলগুলো।
এজন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, বর্তমানে সিলেটে পর্যটন ব্যবসায় লালবাতি জ্বলার উপক্রম। লোকসান গুণে এবার জনবলও ছাঁটাই করতে হচ্ছে। আর আন্দোলন যতই দীর্ঘ হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশাও বেড়ে চলেছে। ফলে প্রতিবাদ স্বরূপ হোটেল-মোটেল বন্ধ করে এবার ‘ব্লাক আউট’ কর্মসূচিতে যেতে পারেন পর্যটন নগরী সিলেটের ব্যবসায়ীরা।
সিলেট হোটেল গেস্ট হাউস অ্যান্ড ওনার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও অভিজাত হোটেল নির্ভানা’র স্বত্বাধিকারী তাহমিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক দিন অবরোধ হলে সিলেটে হোটেল গেস্ট হাউসগুলোর ব্যবসায় দেড় কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়। এ হিসাবে অবরোধের এক মাসে সিলেটে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার উপরে হোটেল-মোটেল ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। এবার হোটেল-মোটেল বন্ধ করে ব্লাক আউট কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
জাফংলয়ের ক্ষুধা রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, আসবাবপত্র থেকে খানাপিনায় এই রেস্টুরেন্টের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এখানে আসা পর্যটকরা একবারের জন্য হলেও ক্ষুধা রেস্টুরেন্টের অতিথি হন। আমরাও খাদেমদারি করে তৃপ্ত হই।
তবে এক মাসের অবরোধে এখন পুঁজি ভেঙে কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে।
বল্লাঘাট পিকনিক সেন্টারের কর্মকর্তা পলাশ আহমদ বলেন, এ মৌসুমে পর্যটকদের গাড়ি স্থান দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু অবরোধের কারণে এখন প্রতিনিয়ত লোকসানের বোঝা বাড়ছে।
সিলেট পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক কাজি আশরাফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ মৌসুমে যেখানে ৭০/৮০ ভাগ পর্যটক আসতেন। সেখানে এখন মাত্র ১/ ২ ভাগ। এক কথায় করুণ দশা বললেই চলে।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত না হলে ব্যবসার খরা দূর হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, টানা এক মাসের অবরোধে ১০/১২ লাখ টাকার মতো রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, নগরীতেই তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ৬০ লাখ টাকার মতো লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান।
তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে কর্মচারীদের ছাঁটাই করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫