ঢাকা: এটি সেতু বানানোর কারখানা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভাষায় এর নাম ‘ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড’।
পদ্মাসেতু হতে যাচ্ছে বিশ্বের খরস্রোতা কোন নদীর সবচেয়ে বড় সেতু তেমনি এর ‘ফ্রেব্রিকেশন ইয়ার্ড হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড়, কথাটি বাংলানিউজকে বলছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ছয় বিশেষজ্ঞ প্যানেলসহ সেতু প্রকল্প এলাকা ঘুরে আসেন তিনি। এসময় পদ্মার চরে চায়না মেজর ব্রিজের তৈরি ‘ফ্রেব্রিকেশন ইয়ার্ড’ পরিদর্শন করেন।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা বলছেন, স্বপ্নের খোলস ছেড়ে দৃশ্যপটের পদ্মা সেতু এখন মেতেছে নির্মাণযজ্ঞের ব্যস্ততায়। তবে মহাব্যস্ততা চোখে পড়বে মাস দুয়েকের মধ্যেই। টেস্ট পাইল জোড়া লাগানো এবং মূল পাইল আসার পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার হ্যামার যখন স্থান পাবে এই ফ্রেব্রিকেশন ইয়ার্ডে তখন তা মেতে উঠবে আরও কর্মব্যস্ততায়।
সেতুর প্রকৌশলীরা জানান, ৩০০ একর আয়তনের এই ফ্রেব্রিকেশন গ্রাউন্ড। যার একদিক দিয়ে স্টিল প্লেট ঢুকবে আরেকদিক দিয়ে পাইল বের হবে। ফ্রেব্রিকেশন ইয়ার্ড-এ ব্রিজের সুপার স্ট্রাকচার কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে।
মূলত এখানে প্রি ফেব্রিকেটেড যন্ত্রপাতির কাজ হবে। ওয়ার্কশপ নির্মাণের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন বলা যায়, জানান সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী।
‘ফ্রেব্রিকেশন ইয়ার্ড’-এ স্টিল প্লেট থেকে পাইল তৈরি করার মেশিন ও ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়ে কাজ শেষে তা ক্রেনের মাধ্যমে তুলে নিয়ে গাঁথা হবে নদীর গভীরে।
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমেই টেস্ট পাইলের কাজ দিয়ে ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডের বড় বড় কাজগুলো শুরু হবে। ’
তিনি জানান, মূল সেতুর পাইলগুলো হবে তিন ডায়ামিটারের। তবে টেস্ট পাইলের ক্ষেত্রে দেড় ডায়ামিটার দিয়ে ধারণক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে।
টেস্ট পাইলিং হ্যামারগুলো চীন থেকে চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে থেকে মাওয়া পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
জামিলুর রেজা বলেন, মূল পাইলের পাইল ড্রাইভিং হ্যামার (যা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন) জার্মানিতে বানানো হচ্ছে।
তিনি জানান, তিন ডায়ামিটারের পাইলগুলো দেখতে গোলাকৃতির। এর স্টিল প্লেইট হবে ফ্লাট। এটা বেশ মোটা। এটা পদ্মার ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে এনে ফ্রেব্রিকেট করা হবে। এটা হবে পৌনে ৩ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের। ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে এটাকে বাঁকা করে গোল করতে হবে। এটার জন্য প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা একটা স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বাঁকা ও ওয়েল্ডিং করার কাজ এখানে করবে চায়না মেজর ব্রিজ। পরে সেটা ২৫ মিটার টুকরো করে বের করা হবে।
পাইল ড্রাইভিং করা হলেই ওয়েল্ডিং করে জোড়া লাগিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু মাথা তুলে দাঁড়াবে ৪২ টি পিলারের উপর। পদ্মার দু’দিকে থাকবে দুটো আর মাঝখানে ৪০ টি পিলার। পিলারের প্রত্যেক জায়গা সয়েল বোরিং করার কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ৮ টি সয়েল বোরিং সম্পন্ন হয়েছে। আর নদীশাসন কাজের জন্য অনেকগুলো ড্রেজার লাগবে। এরমধ্যে কিছু ড্রেজার এসে গেছে বাকিগুলো আসার পথে রয়েছে। ড্রেজিং কাজ হলে পদ্মার দক্ষিণ দিকে চারশ মিটার ট্রায়াল সেকশন করা হবে।
জামিলুর রেজা চৌধুরী জানান, পদ্মা সেতুর জন্য দেশীয় অনেক উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেগুলো ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে এনে জড়ো করা হচ্ছে।
তিনি জানান, দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা থেকে আনা পাথর ব্যবহার করা হবে। আর দেশের তৈরি সিমেন্ট দিয়িই তৈরি হবে পদ্মাসেতু। মান পরীক্ষার পর এ সিদ্ধান্ত আগেই দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
** অবরোধে নৌপথে পৌঁছাচ্ছে পদ্মাসেতুর মালামাল
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫