ঢাকা: শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ে বেড়েছে বিক্রিও।
মেলায় গতবারের তুলনায় ওয়ালটনের বিক্রি ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ালটন আগের ধারাবাহিকতায় এবারও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। পণ্য বিক্রি বাড়ায় সরকারের কোষাগারে ভ্যাট প্রদানেও এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বিশেষ ছাড়ে ইলেক্ট্রনিক পণ্য কিনতে মেলার শো-রুমগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। কিনে নিচ্ছেন পছন্দের টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোনসহ যাবতীয় হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য।
এবারের মেলার শেষ দিকে ওয়ালটনের মোবাইল সেট কিনতে প্রতিষ্ঠানটির প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ৩০টিরও অধিক মডেলের মোবাইল সেট মেলায় আনা হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আরও কয়েকটি মডেল বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। মোবাইল সেটের পাশাপাশি আগামী বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে ওয়ালটন টিভি বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন মডেলের এলইডি টিভি মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া ফ্রিজ এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সসহ ওয়ালটনের অন্য পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্যাভিলিয়ন ও স্টলে গৃহস্থালী থেকে শুরু করে ওভেন, টিভি, ফ্রিজ, এসি, মটোরসাইকেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মিলছে। শনিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ছুটির দিন দেশীয় ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটনের প্যাভিলিয়নে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ প্যাভিলিয়নে ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করতে নতুন অনেক পণ্য এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। মেলা উপলক্ষে নানা ধরনের পণ্যে বিভিন্ন হারে মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত দেশীয় পণ্য হওয়ায় বেশি আগ্রহ বলে জানালেন বিক্রেতারা।
ওয়ালটনের প্যাভিলিয়ন ম্যানেজার আকরামুজ্জামান অপু বলেন, মেলার প্রথম থেকেই ওয়ালটনের প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় ছিলো, বিক্রিও হচ্ছে আশানুরূপ। ক্রেতাদের কাছ থেকে এবারের মেলায় অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। বিক্রির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে মোবাইল ও ফ্রিজ। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০টি ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, ২১ হাজার থেকে লাখ টাকার মধ্যে ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের ফ্রিজটি সংগ্রহ করতে পারছেন। দেশীয় পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এর মূলে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দেশের আবহাওয়া উপযোগী, পণ্যের গুণগতমান এবং বিক্রয়োত্তোর সেবা। যার সবই ওয়ালটনের রয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি ফ্রিজের উপর ক্রেতাদের পূর্ণ আস্থা এসেছে।
আকরামুজ্জামান বলেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য থেকে ওয়ালটনের উৎপাদিত ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোটর সাইকেল গুণগত মানে কোনো অংশে কম নয়। দেশীয় পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিক্রিই তার প্রমাণ।
সর্বোচ্চমানের প্রযুক্তি ও কাঁচামাল দিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে ওয়ালটন ফ্রিজ, টিভি, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও অটোমোবাইল পণ্য। বাণিজ্য মেলা ছাড়াও সারা দেশে ৫ শতাধিক বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে চলছে বিপণন কার্যক্রম।
ওয়ালটন কর্মকর্তরা বলেন, ওয়ালটন ফ্রিজে ব্যবহৃত হয়েছে ডিইসিএস, আলট্রাবিড ফোর-ডি প্রযুক্তি, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ন্যানো পারটিকেল। ব্যবহৃত হচ্ছে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এনার্জি সেভিং এলইডি ল্যাম্প। ডোরসহ সব পার্টস সহজলভ্য এবং রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টিও রয়েছে। ফলে ওয়ালটন ফ্রিজের ব্যাপক চাহিদা।
তারা জানান, বর্তমানে দেশে ফ্রিজের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফ্রিজ দিয়ে। বাংলাদেশ এখন ফ্রিজ রপ্তানিকারক দেশ। শুধু তাই নয়, কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশেরই ফ্রিজের বাজারের একটি বড় অংশ দখল করতে যাচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফ্রিজ। একটি ওয়ালটন ফ্রিজ অনায়াসে ২৫-৩০ বছর ব্যবহার করা যায়। ন্যানো পার্টিকেল থাকায় ফ্রিজের খাবার সহজে নষ্ট হয় না। খাবার দীর্ঘক্ষণ ঠাণ্ডা থাকে।
ওয়ালটনের বিপণন বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক সরকার জানান, মেলায় ২৫৪ ও ৩১৭ লিটারের নতুন মডেলের ফ্রিজ এনেছেন তারা। এছাড়া বাজারে ছাড়ার অপেক্ষায় আছে এমন মডেলের সংখ্যা ১১।
তিনি বলেন, মেলায় সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়া দেওয়া হয়েছে ফ্রিজে।
এদিকে ওয়ালটনের টেলিভিশনকে ঘিরেও দর্শক-ক্রেতার ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের জটলা ছিল ওয়ালটনের নিয়মিত ও আপকামিং টেলিভিশনের সামনে।
ওয়ালটনের বিপণণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রায়হান বলেন, মেলায় এসেছে ওয়ালটনের নতুন মডেলের টিভি। এরমধ্যে ৩২ ইঞ্চি ইন্টারনেট সার্ফিং টিভি, ১৯ ও ২৪ ইঞ্চি কালার লাইন এলইডি, ৫৫ ও ৬৫ ইঞ্চি কার্ভ ওএলইডি (অর্গানিক লাইট ইমিটিং ডায়াড) টিভি এবং ৬৫ ইঞ্চি এএইচডি (আল্ট্রা হাই ডেফিনেশন) থ্রিডি স্মার্ট টিভি অন্যতম। নতুন মডেলের এসব টিভি ক্রেতাদের আকর্ষণের শীর্ষে রয়েছে বলে তিনি জানান।
ওয়ালটনের প্যাভিলিয়নের দ্বিতীয় তলায় প্রায় পুরোটা অংশ জুড়েই রয়েছে মোবাইল। সর্বশেষ প্রযুক্তির মোবাইল সেট ও ট্যাব রয়েছে এখানকার মূল আকর্ষণ হিসেবে।
মোবাইল বিভাগের ইনচার্জ নাজমুল হোসেন জানান, বিক্রির দিক থেকে ওয়ালটন মোবাইল দেশের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এবার প্রিমো সিরিজের এক্স-টু, এক্স-টু মিনি, এক্স-থ্রি, জেডএক্সসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রায় ৫০ টি মডেলের মোবাইল সেট রয়েছে বাণিজ্য মেলায়। নতুন মডেলের ওয়াল প্যাডও ক্রেতারা পাচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়ে। এবার মেলা চলাকালীন নতুন মোবাইল সেট এসেছে সাতটি। এগুলো হলো- আরএইচ, জিএম মিনি, ডি৫, প্যাডজি, এনএফ প্লাস ও জেড। এরমধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে আরএইচ ও জিএম মিনি।
এরইমধ্যে ওয়ালটন বাজারে এনেছে ৩৪টি বিভিন্ন ধরনের হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স। মেলায় যোগ হয়েছে নতুন ‘এয়ার ফ্লাইয়ার’ প্রযুক্তির কুকার। এই কুকারে রান্না করতে আলাদাভাবে তেলের প্রয়োজন হয় না। মেলায় আকর্ষনীয় মূল্য ছাড় পাওয়া যাচ্ছে ব্লেন্ডার, হেয়ার স্ট্রেটনার, রাইস কুকারসহ নিত্য প্রয়োহজনীয় গৃহস্থালী পণ্যে।
এবারের মেলায় ওয়ালটনের সেলস ও ডিসপ্লে সেন্টার দুটি। ৮ নম্বর প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নটি তৈরি হয়েছে মেলার মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে প্রধান টাউয়ারের পশ্চিম পাশে ফোয়ারা সংলগ্ন স্থানে। ২ নম্বর গেট এবং সার্ভিস গেট দিয়ে প্রবেশ করলে সামনেই পড়বে। এখানে প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে প্রধানত ওয়ালটনের ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল ফোন সেট ও মোটরসাইকেলের মতো পণ্য।
বাংলাদেশ সময় : ১৩০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫