ঢাকা: চলমান টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে ক্রেতা মিলছে না রাজধানীর সুপার চেইনশপগুলোতে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সবজিসহ নানা পণ্যে ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও বেচা-কেনা কমে গেছে নগরীর বিজিবি স্কয়ার মার্কেটের চেইনশপ আগোরায়।
অপরদিকে ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডের মিনাবাজারে গৃহকর্মীসহ বাসার কাজের লোকেরাই বেশি পণ্য কিনতে আসছেন। কারণ, হরতাল-অবরোধে প্রাইভেট কার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসছেন না গৃহকর্তারা। তারা গৃহকর্মীদের দিয়েই বাজার করাচ্ছেন।
রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগোরায় গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা নেই বললেই চলে। ক্রেতা টানার জন্যে সবজিতে প্রচলিত মূল্যের থেকে কম দাম রাখা হচ্ছে। যেমন প্রতিকেজি শসা ২০ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, টমেটো ২৬ টাকা, মূলা ২০ টাকা, করলা ৭৫ টাকা, আলু ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবুও আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছে না আগোরা।
আগোরারর ফ্লোর অফিসার সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে সবজিসহ নানা পণ্যে অফার দিচ্ছি, তবুও ক্রেতা পাচ্ছি না। সেলস বলতে কিছুই নেই। এতে করে আমাদের বেতনও আটকে গেছে। প্রতি মাসে সঠিক সময়ে বেতন হলেও এ মাসে পাচ্ছি না।
তবে আগোরায় সবজিতে ছাড় দিলেও অন্যান্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বি। যেমন প্রতি কেজি চামড়া ছাড়া দেশি মুরগি ২৩৫ টাকা, পাকিস্তানি কক ৪৭৫ টাকা, চামড়াসহ ব্রয়লার মুরগি ২১৫ টাকা, গরুর মাংস ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরবরাহ কম ও দাম চড়া থাকায় মাছ কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতি কেজি মাছ রুপচাঁদা ৯৬৫ টাকা, বড় গলদা চিংড়ি ১২৯৮ টাকা, বাটা মাছ ৪৮৫ টাকায়, কাতলা ৩৮৫ টাকা, চিতল ৬৩০ টাকা, বড় রুই ৭৩৫ টাকা, বড় কাতলা ৬৫০ টাকা, শিং মাছ ৬৮০ টাকা, মাগুর ৬৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪৯ টাকা ও শোল মাছ ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন ১০৫ টাকা, হরতাল-অবরোধের প্রভাব প্রায় অধিকাংশ সুপারশপে। কোনো কোনো সুপারশপে বেচা-কেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। মিনাবাজারসহ নামি-দামি সুপারশপে প্রাইভেট কারে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এলিট শ্রেণীর ক্রেতারা আসেন। কিন্তু এখন হরতাল-অবরোধে গাড়ি বের করতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
এখন বাড়ির গৃহকর্তারা গৃহকর্মীদের দিয়েই বাজার করার কাজটি সেরে নিচ্ছেন। চেইনশপ মিনাবাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ কারণেও বেচা-কেনা একেবারেই কম হচ্ছে।
মিনাবাজারের ধানমণ্ডি আউটলেট ইনচার্জ রোনিকা সমাদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে অধিকাংশ ক্রেতা প্রাইভেট কারে চড়ে বাজার করতে আসেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে এখন তারা প্রাইভেট কার বের করতে ভয় পাচ্ছেন। তাই বাড়ির মালিকরা বাজার করতে কম আসছেন। গৃহকর্মী ও কাজের লোকদের তারা বেশি পাঠাচ্ছেন।
বাড়ির মালিক যা বলে দেন, গৃহকর্মীরা সে পরিমাণেই বাজার করেন। বাড়ির মালিক যদি ১০ টাকার জিরা কিনতে বলেন, তবে তারা সে পরিমাণেই জিরা কেনেন। কিন্তু বাড়ির মালিক ১০ টাকার জিরা কিনতে এলেও এর পাশাপাশি হাজার টাকার অন্য পণ্য পছন্দ হলে সেটিও কিনে নেন। এতে আমাদের বেচা-কেনা বেশি হতো।
মিনাবাজারে বাজার করতে আসা হাওয়া খাতুন জিগাতলার মনেশ্বর রোডের শফিকুল ইসলাম দিদারের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাটারা(বাড়ির মালিক) আয় ক্যামনে? গাড়ি নিয়া বের হইলেই ব্যাটাগো দেয় মাইরা। কদিন বাসা বাড়ির বাজার আমিই করি।
মিনাবাজারের সিনিয়র ম্যানেজার (ব্র্যান্ড অ্যান্ড সেলস) আহমেদ সোয়েব ইকবাল বাংলানিউজেক বলেন, হরতাল-অবরোধে বেচা-কেনা অর্ধেকেরও কম হচ্ছে। দেশের খারাপ পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা গাড়ি নিয়ে আসতে ভয় পান।
যেসব মধ্যবিত্তরা বাজার করতে এসেছেন তারাও শুধু প্রয়োজন মতোই কেনাকাটা করছেন। হরতাল-অবরোধে তাদের আয়ও অনেক কমে গেছে। ধানমণ্ডির একটি সুপারশপে এসেছিলেন রিশাদ কম্পিউটার্স লিমিটেডর ম্যানেজার আহসান হাবিব তানভির।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাজার করতে এসে যেটুকু দরকার, তার বাইরে যেতে পারি না। আগে মাসে তিন থেকে চারবার বাজার করতে আসতাম। এখন দু’বার আসতেই হিমশিম খাচ্ছি। কারণ, কম্পিউটারসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্য ভালোমতো বিক্রি করতে পারছি না। ব্যবসা না হলে বেচা-কেনা কিভাবে করবো?
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫
** চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস এক চতুর্থাংশে নেমেছে
** হরতাল-অবরোধ, দেখার সময় নেই পোশাক শ্রমিকদের
** জনগণের চিন্তা কেউ করে না
** প্রাণহীন কাঁচাবাজার