সিলেট: টানা অবরোধের আঁচড় লেগেছে সিলেটের চা শিল্পেও। অবোরধ, হরতালের কারণে সিলেটের চা শিল্পে রীতিমতো বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে সময়মতো চা বাজারজাত করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় বাগান মালিকরা। তারা জানান, উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রে নিতে না পারায় সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা যাচ্ছে না, ফলে সুদের ঘানি টানতে হবে তাদের।
তাছাড়া দীর্ঘদিন গুদামে পড়ে থাকলে আদ্রতা কমে চা শুকিয়ে গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে চায়ের সুগ্রাণটাও হ্রাস পাবে।
এ সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সংঘাতের অবসান এবং শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনেরও দাবি জানিয়েছেন বাগান মালিকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে ১৫৮টি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটে ২০টা, মৌলভীবাজার ৯০, হবিগঞ্জে ২৩ ও চট্টগ্রামে ২৫টি রয়েছে। সারা দেশে সাতটি ভ্যালিতে বিভক্ত চা বাগানের ৬ ভ্যালিই সিলেটে বিভাগে। এগুলো হলো- সিলেট, বালিশিরা, লস্করপুর, সুরমা, লংলা ও মনু। এসব ভ্যালির বেশিরভাগ বাগানের চা পরিবহন করতে না পারায় গুদামেই পড়ে রয়েছে।
চাবাগান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ভ্যালির বাগানগুলোতে প্রায় ৪ লাখ কেজি, শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা ভ্যালির বাগানগুলোতে ৩ লাখ কেজি, সুরমা ভ্যালির বড় কাপনা বাগানে ৩০ হাজার ও কালারগুল বাগানে ৩০ হাজার কেজি এবং হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির বাগানে প্রায় তিন লাখ কেজি চা অবিক্রিত অবস্থায় গুদামজাত রয়েছে।
বাংলাদেশ টি স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল চৌধুরী বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কিছু কিছু বাগান মালিকরা ঝুঁকি নিয়ে রাতের আধারে চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রে চা পাঠোনো অব্যাহত রেখেছেন। এরপরও অবরোধের কারণে সাড়ে ১০লাখ কেজি চা গুদামজাত রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বছরে (মার্চ থেকে মার্চ) ৪৫টি নিলাম হয়। এরইমধ্যে ৪৩টি নিলাম শেষ হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে তিনটি। এই তিন নিলামে চাপাতা বিক্রি করতে না পারলে এগুলোর দাম কমে যাবে। নতুন বছরে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। অবরোধে চা শিল্প চরম ক্ষতির সম্মুখীন বলে জানান তিনি।
সিলেট কালারগুল চা বাগানের ব্যবস্থাপক প্রদীপ দাশ বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ৩৫ হাজার কেজি চা বাগানের ফ্যাক্টরিতে আটকে রয়েছে। অবরোধের কারণে সেগুলো নিলাম কেন্দ্রে পাঠানো যাচ্ছে না।
চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও খাদিম চা বাগানের ব্যবস্থাপক নোমান হায়দার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট ভ্যালির ১৯টি বাগানের মধ্যে অন্তত ১০টি বাগানের প্রায় ৪লাখ কেজি চা পাতা পরিবহনের অভাবে আটকে রয়েছে। অনেকে নিলাম কেন্দ্রে চা পাতা পাঠালেও ক্রেতারা আসতে না পারায় বিক্রিও হচ্ছে না।
তিনি বলেন, অন্য সময়ে মান অনুযায়ী ১৫০ থেকে ২শ টাকা করে প্রতিকেজি চাপাতা বিক্রি হতো। তাই নিলাম কেন্দ্রেও কেজি প্রতি প্রায় ৩০-৪০ টাকা কমে গেছে। অথচ কেজিপ্রতি চা পাতায় উৎপাদন খরচ পড়ে দেড়শ’ টাকা। গুদামজাত থাকলেও এসব পাতার মান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যেত।
বাংলাদেশ চা সংসদের সভাপতি সাফওয়ান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে র’মেটেরিয়াল বা উপদানগুলো পরিবহন করা যাচ্ছেনা। এতে ক্ষতির সম্মুখীন বাগান মালিকরা।
চা শিল্প গবেষক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আশরাফুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধে হরতালে চা পাতা উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষতি হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে পরিবহণ করতে না পারায়। পাশাপাশি বাগানের শ্রমিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, চা বাগানে মূলত তিন ধরনের শ্রমিক কাজ করে থাকেন। স্থায়ী, অস্থায়ী, শিশু শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক। এদের মধ্যে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কম। অবরোধে চা পাতা পরিবহন হচ্ছে না দেখিয়ে কতিপয় বাগান মালিক শ্রমিকদের টাকা আটকিয়ে রাখেন। ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন চা শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫