হিলি(দিনাজপুর): অবরোধ-হরতালের কারণে হিলি স্থলবন্দরে ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই ট্রাকের সংখ্যা। যেকারণে এ স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় কমেছে।
বর্তমানে ভারত থেকে আমদানিকৃত যে পণ্য আসছে তা ট্রাকের অভাবে দেশের অভ্যন্তরে পাঠাতে সমস্যায় পড়ছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। কারণ, অবরোধের মধ্যে রাস্তায় ট্রাক নামাতে অনিহা প্রকাশ করছে অধিকাংশ ট্রাক মালিক।
অবরোধ-হরতালের আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক ট্রাক ছেড়ে যেতো। ট্রাকের সে সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪০/৪৫ এ।
পানামা হিলিপোর্ট লিংক লিমিটেডের সহকারী ম্যানেজার এসএম হায়দার বাংলানিউজকে জানান, গত ডিসেম্বর মাসে ভারত থেকে মোট ৩৫শ’ ৮০টি ট্রাক আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। জানুয়ারি মাসে প্রবেশ করে ১৯শ’ ৭১টি। আর ফেব্রুয়ারি মাসে শনিবার পর্যন্ত ৫শ’ ৬৯টি আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই ট্রাক এসেছে।
এর ফলে একদিকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আসা যেমন কমছে, তেমনি এর প্রভাবও পড়েছে পণ্য খালাসের কাজে নিয়োজিত বন্দরে কয়েকশ শ্রমিকের ওপর। বন্দরের ওপর নির্ভরশীল শ্রমিকদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে, চলমান অবরোধ-হরতালের ফলে আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
হিলি স্থলবন্দরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে যে পণ্যগুলি ভারত থেকে আসছে, তাতে সরকারের তেমন রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। যদি ভারত থেকে কমার্শিয়াল আইটেমগুলো আসতো তা হলে সরকারের রাজস্ব বেড়ে যেত।
তিনি বাংলানিউজকে আরো জানান, নাশকতার আশঙ্কায় প্রায় ৫০ শতাংশ গাড়ি বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। ফলে ট্রাক সংকট তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্য ডেলিভারিতে তথা সরকারের রাজস্ব আহরণে।
তিনি বলেন, বর্তমানে কমার্শিয়াল আইটেম না আসলেও গম, ভূটা, চাল, খইল, কয়লা এবং কাঁচা পণ্য পেঁয়াজ ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে।
ট্রাক মালিকরা জানান, মহাসড়কে গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। এছাড়া হতাহত হচ্ছেন চালক ও সহকারীরা। ফলে তারা গাড়ি চালাতে চাইছেন না। হরতাল-অবরোধে ঝুঁকি নিয়ে ৫০ শতাংশ পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করলেও, বাকি ৫০ শতাংশ রয়েছে বন্ধ।
হিলি স্থলবন্দর ঘুরে দেখা যায়, বন্দরে প্রায় শতাধিক ভারতীয় ট্রাক পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে; শেডে অলস সময় কাটাচ্ছেন অনেক শ্রমিকরা।
যদিও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়- অবরোধের মধ্যে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির পাহারায় প্রতিদিন পণ্য বোঝাই শতশত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন হিলি স্থলবন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে পোঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবরোধের তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বন্দর থেকে পাহারায় থাকার পরেও বেশ কয়েকটি ট্রাক দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। পণ্য পাঠানোর পরেও তার আতঙ্কে থাকেন। ট্রাকের ভাড়াও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া ট্রাক সংকটের কারণে সময়মতো পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
হিলি স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. মহিববুর রহমান ভূঞা বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৩/১৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বিপরীতে আয় হয় ১৫৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
১৪/১৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিপরীতে এখন পর্যন্ত আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
তিনি আরো বলেন, গত বছর থেকেই এবন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। অবরোধ হরতালের মধ্যে যে পণ্যগুলি আসছে তাতে সরকারের নির্ধারিত রাজস্ব কম ধাকায় আদায় আরো কম হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫