ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাঁচশ’ কোটি টাকার বেশি ঋণশোধে বিশেষ প্যাকেজ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫
পাঁচশ’ কোটি টাকার বেশি ঋণশোধে বিশেষ প্যাকেজ

ঢাকা: পাঁচশ’ কোটি টাকারও বেশি ঋণগ্রস্ত শিল্পপতিরা মাত্র ১ শতাংশ ঋণ শোধ করেই ১২ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন। প্রতিটি কিস্তি হবে ৩ মাস মেয়াদের।



বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য ঘোষিত এক বিশেষ শিল্প প্যাকেজে শিল্প মালিকদের এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ‘বড় অংকের ঋণ পুনর্গঠন’ শিরোনামে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারও জারি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক চৌধুরী মোহাম্মদ ফিরোজ বিন আলম।

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর দেশের শিল্প রক্ষায় ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের বিশেষ প্যাকেজ এটিই প্রথম। আগে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ঋণ শোধ করতে হতো। আর এর মেয়াদ ছিলো সর্বোচ্চ ১ বছর।

সোমবার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় সদ্য ঘোষিত সার্কুলার অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ফরমে প্রতিষ্ঠানের সিইও/এমডি স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র ‘নো অবজেকশন’ এর জন্য চলতি ২০১৫ সালের জুন ৩০ এর আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টে পাঠাতে হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, ‘নিজেদের আয়ত্বের বাইরের চলমান বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণে ঋণগ্রহীতারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়েছেন। এ পরিস্থিতি এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে, বর্তমান নীতিকে উদার করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বড় ঋণগ্রহীতাদের ব্যাপারে যাদের একাধিক ব্যাংকের সাথে লেনদেন আছে। এসব বড় ধরনের ঋণগ্রহীতাদের আর্থ-সামাজিক এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে তাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড অভ ডিরেক্টর্স উক্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছে। ’

বাংলাদেশে ঋণগ্রহীতাদের এ ধরনের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী) বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারত, ফিলিপাইন, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেসব দেশের নীতি পর্যালোচনা করেই বাংলাদেশেও এ প্রথম একটি নীতিমালা তৈরি করা হলো। অনিচ্ছাকৃতভাবে যারা ব্যবসায় ক্রমাগত লোকসান দিয়েছেন তাদেরকে রক্ষা একই সঙ্গে ব্যাংকের ঋণ আদায় ও লোকসানের প্রভাব যাতে না পড়ে সেজন্যই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো। ’ তিনি বলেন, ‘এতে করে শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান, আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংক ঋণ আদায়ে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ’

এ বিষয়ে জানার জন্য দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যারা কষ্ট করে শিল্প গড়েছেন, এখন বিপদে আছেন, তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য সরকার নীতিমালা তৈরি করেছে। সেই নীতিমালা এখনও পড়ে দেখিনি। নীতিমালা পড়ার পর বুঝতে পারবো এটি দেশ ও শিল্পের জন্য কতটা সহায়ক হবে। ’

একই প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান নূরজাহান গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ এ উদ্যোগের কথা শুনেছি। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। এটি মৃতপ্রায় রোগীকে কোরামিন দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার মতোই। দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করলেই বুঝা যাবে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ঋণগ্রস্ত হতে চায় না। আবার হলমার্কের মতো জালিয়াতি যারা করেছে সেসব প্রতিষ্ঠান এসব বিশেষ প্যাকেজের সুবিধা পাবে না। ’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপ, চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, এমইবি, ইমাম গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, রুবাইয়া ভেজিটেবল, বিএনপি উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী’র প্রতিষ্ঠান রাইজিং গ্রুপ-সহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ রয়েছে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে। চাল, তেল, গম, চিনি, গুঁড়াদুধসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি করে, ভোজ্যতেল শোধনাগারসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ক্রমাগত লোকসান দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা করায় গত কয়েক বছর ধরে লোকসান দিতে দিতে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় রুগ্ন হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই, ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ করা, শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া সহ ব্যাংকের নিয়মিত ঋণ পরিশোধেও অক্ষম হয়ে পড়ে।

যে খাতের জন্য ঋণ নিয়েছে সেই খাতে ব্যবহার না করে জমি-ফ্ল্যাট কেনা, শেয়ারে বিনিয়োগ করাসহ বিভিন্ন অনুদপাদনশীল খাতে ঋণের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলেও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। দামি বিলাসবহুল গাড়ি কেনা, সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণ ও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কানাডার মতো পৃথিবীর ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ দেশে ফ্ল্যাট ও বাড়িও কিনেছেন অনেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ঋণ পুনর্গঠনের জন্য যেসব যোগ্য ঋণ তার জন্য ৩টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। শর্তগুলো হলো ক) একটি ব্যাংকে নির্দিষ্ট কোনো গ্রহীতা অথবা গ্রুপের একা বা সমষ্টিগতভাবে ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বিবেচিত হতে পারে। একাধিক ব্যাংকে লেনদেন আছে এমন ঋণগ্রহীতা একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেও এগুতে পারেন।

খ) পুনর্গঠনের জন্য অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ সমষ্টিগতভাবে ৫০০ কোটি বা তার বেশি হতে হবে।
গ) পুনর্গঠনের সুবিধা শুধু একটি নির্দিষ্ট ঋণ অ্যাকাউন্টে একবার দেয়া হবে।

তবে, প্রতারণা বা জালিয়াতির মানসিকতাসম্পন্ন ঋণগ্রহীতারা এজন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।