ফেনী: বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা লাগাতার অবরোধের কারণে ফেনী জেলায় একদিকে বেড়েছে পোল্ট্রি ফিডের (মুরগির খাবার) দাম। অন্যদিকে দাম কমেছে ফার্ম বা বিদেশি মুরগি হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির।
ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি কমেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর ডিমের দাম হালিতে ২/৩ টাকা কমেছে। ফেনীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা দরে। যা অবরোধের আগে ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে খামারিরা হালিপ্রতি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি করতেন ২৮/২৯ টাকায়। হরতাল অবরোধে গাড়ি না পাওয়ায় মজুদ বেড়ে গেছে । ফলে পচনের ভয়ে সেই ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ২৬/২৭ টাকায়।
৬ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান অবরোধে মুরগির খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা।
ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের পোল্ট্রি খামারি ফখরুল ইসলাম জানান, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে পুরো ফেনী জেলায় দৈনিক ১শ’ পোল্ট্রি ফিডবাহী গাড়ি আসতো, সেখানে এখন আসে মাত্র ৩০টি।
ফলে প্রতি টন খাবারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। আগে প্রতি টন মুরগির খাবারের দাম ছিল ৩৭ হাজার টাকা। হরতাল-অবরোধের ফলে সেই খাবারের দাম হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
সে হিসেবে বস্তা প্রতি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০ টাকার মতো। স্বাভাবিক সময়ে বস্তা প্রতি দাম ছিল ১৭০০ টাকা, অবরোধে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়িয়েছে ১৯০০ টাকায়।
মুরগির খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও আশানুরূপ পরিবহন ব্যবস্থা না থাকার কারণে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। খামার পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বিভাগের পোল্ট্রি জোন হিসেবে খ্যাত ফেনীর সদরের মোটবী এলাকা। এখানে প্রায় অর্ধ শতাধিক লোক এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অনেকেরই সংসার চলে পোল্ট্রি ব্যবসার মাধ্যমে। টানা অবরোধে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
লেমুয়ার মেমোরি পোল্ট্রি ফার্মের মালিক নুরুজ্জামান সোহাগ জানান, মাসব্যাপী লাগাতার অবরোধের কারণে উৎপাদিত ডিম বাজারজাত করতে পারছেন না তারা। ফলে ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অপর ব্যবসায়ী কাশেম জানান, মুরগি বিক্রির যোগ্য হলেও পরিবহন সংকটে তা বাজারে নেওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন তারা।
মাসুক জানান, তার খামারে প্রতিদিন ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ ডিম উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রতিটি মুরগির পেছনে দৈনিক ৫ থেকে ৬ টাকা করে ওষুধসহ আনুষাঙ্গিক খরচ পড়ে। কিন্তু বাজারে ডিমের মূল্য কমে যাওয়ায় প্রতিদিন তার ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা লোকসান হচ্ছে।
জেলার ফুলগাজী উপজেলার করইয়া গ্রামের সুমন পোল্ট্রি ফার্মের মালিক সাফায়েত উল্যাহ সুমন জানান, তার পোল্ট্রি ফার্মের দৈনিক উৎপাদিত ডিম সময়মত বিক্রি করতে না পারায় তা সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে, দাগনভূঞার রাজাপুরে হক এগ্রোর মালিক নাজমুল হক জানান, টানা অবরোধের কারণে ক্রেতা না থাকায় ব্রয়লার মুরগি চাহিদা কমে গেছে। ফলে খরচের তুলনায় কম মূল্যে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। ফলে প্রতিদিন তাদের হাজার হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।
খাদ্য ও ওষুধের উচ্চ মূল্যের কারণে তাদের কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফেনী শহরের দাউদপুর পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিডস্-এর মালিক মো. নাজমুল করিম আলমগীর জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত গাড়ি না পাওয়া ও দ্বিগুণ ভাড়ার কারণে এজেন্ট ও খামারিদের কাছে যথা সময়ে খাদ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না।
এছাড়াও অবরোধের কারণে সরবরাহ না থাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে মুরগির খাদ্য ও ওষুধের মূল্য। এ অবস্থায় খামার চালিয়ে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে পোল্ট্রি খামারিদের কাছে।
খামারিদের দাবি, সংকটময় পরিস্থিতি নিরসনে দু’দল বসে ব্যবসা-বাণিজ্যের অচলাবস্থা রোধে সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫