আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। ফলে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ কমেছে ছয় কোটি এবং রাজস্ব আয় কমেছে দুই লাখ টাকা।
এছাড়া অবরোধের আগে এ স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯০ গাড়ি পণ্য রপ্তানি হতো, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০ গাড়ি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রপ্তানিকারক আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরাসহ সাতটি পাহাড়ি রাজ্যে (যা সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত) ইট, বালু, পাথর, সিমেন্ট, ছোট-বড় মাছ, শুটকি, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ প্রায় ৫০ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়।
কিন্তু ২০ দলীয় জোটের টানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশের শতভাগ রপ্তানিমুখি এ বন্দরটিতে এখন বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার (অতিরিক্ত) আহসান উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ এ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ৪১ কোটি টাকা। কিন্তু অবরোধের কারণে জানুয়ারি মাসে রপ্তানি হয় মাত্র ৩৫ কোটি টাকার পণ্য।
অবরোধের কারণে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমতে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় রপ্তানি বাণিজ্য শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাছাড়া আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৯০ গাড়ি পণ্য রপ্তানি হতো বর্তমানে অবরোধের কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০ গাড়ি।
অথচ ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে প্রায় তিন কোটি টাকার বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছিল এই বন্দর দিয়ে। ভারতে এখন নির্মাণ সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও হরতাল
অবরোধের কারণে চাহিদা মতো পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী জুয়েল খাঁ বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধের কারণে ভারতীয় আমদানিকারকদের আমরা ঠিক মতো পণ্য দিতে পারছি না। তাই তাদের কাছ থেকে ঠিক মতো বিলও পাচ্ছি না।
তিনি আরো বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে এক সময় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আমদানিতে বিমুখ হয়ে পড়বে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক পথে নাশকতার কথা চিন্তা করে ট্রাক চালকরা পণ্য পরিবহন করতে অনিহা প্রকাশ করছেন। আবার রাজি হলেও ভাড়া চাচ্ছেন দ্বিগুণ। যে কারণে পণ্য আমদানি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
এদিকে, হরতাল অবরোধের কারণে অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে ঢাকা-আগতলা বাস সার্ভিস। কমে গেছে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পারাপারও। অথচ ভ্রমণের মৌসুম হওয়ায় এখন যাত্রী পারাপার বেশি হওয়ার কথা।
ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া স্থলবন্দরে কাস্টমস দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর আদায় করে ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু জানুয়ারি মাসে আদায় করেছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। অবরোধের কারণে ভ্রমণ করের ক্ষেত্রেও দুই লাখ টাকা রাজস্ব আয় কম হয়েছে।
আখাউড়া চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া বাংলানিউকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই হরতাল অবরোধের কারণে এই চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার প্রায় অর্ধেকে কমে গেছে। যানবাহনের কথা চিন্তা করেই যাত্রীরা আসা-যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫