সিলেট: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতালের প্রভাব পড়েছে সিলেটের পাথর কোয়ারিতে। পাথর উত্তোলনের ভরা মৌসুমে টানা হরতাল-অবরোধে পরিবহন সংকটের কারণে উত্তোলিত পাথর বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
শুধু তাই নয়; কোয়ারি থেকে যেমনি পাথর বিক্রি হচ্ছে না, তেমনি ক্রাসার মিলে মজুদ ভাঙা পাথরও বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে বাড়ছে মজুদ। এসব মজুদ পাথর নিয়েও বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাথর মজুদ করে থাকেন। পাথর বিক্রি না হওয়ায় সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বাড়ছে তাদের ঋণের বোঝাও।
পাথর ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে পাথরের চাহিদার একটি বড় অংশের যোগান আসে সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও জাফলং কোয়ারি থেকে। প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে জাফলংয়ের ডাউকি ও ভোলাগঞ্জের পিয়াইন নদীতে প্রচুর পরিমাণ পাথর নেমে আসে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এসব পাথর উত্তোলন করা হয়। তাই ওইসময়কে পাথর উত্তোলনের ভরা মৌসুমও বলা হয়।
কিন্তু এবার পাথর উত্তোলনের ভরা মৌসুমে লাগাতার হরতাল ও অবরোধের কারণে উত্তোলিত পাথর বাইরে যাচ্ছে না। ফলে কোয়ারিতেই পড়ে আছে পাথরের মজুদ। আর কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
সিলেটের ধোপাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে পাথর বিক্রি নেই বললেই চলে। বিক্রি না থাকায় পাথরের মজুদ নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা। স্থান সংকুলান না থাকায় অনেকেই পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথরের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে।
তিনি জানান, তার হিসাবে সিলেটের ৫০০ ব্যবসায়ীর কাছে অন্তত আড়াই কোটি ঘনফুট পাথর মজুদ রয়েছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
এদিকে পাথর বিক্রি না হওয়ায় স্থানীয় স্টোন ক্রাসারগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ মিলের লোকবল কমিয়ে ফেলা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ স্টোন ক্রাসার মিল। সিলেটের স্টোন ক্রাসার জোন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সদর উপজেলার ধুপাগুলস্থ শাওন অ্যান্ড নাঈম স্টোন ক্রাসার মিলের ম্যানেজার সুরমান আলম বাংলানিউজকে জানান, আগে যেখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক পাথর বিক্রি করতেন তিনি। এখন সেখানে দিনে ২/৩ ট্রাকও বিক্রি হয় না।
তিনি আরো জানান, একদিন মেশিন চালু করলে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু বিক্রি না থাকায় লোকসান দিয়ে তাদের মিল চালু রাখা হয়েছে।
সুরমান বলেন, আরো দু’একদিন এ অবস্থা থাকলে মিলই বন্ধ করে দিতে হবে।
একই ধরনের কথা জানালেন এফ এম এন্টারপ্রাইজের মালিক ফজর আলী। তিনি জানান, পাথর বিক্রি করতে না পারায় তার ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছেন না। ফলে ঋণের বোঝা বাড়ছে। এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে স্টোন ক্রাসার ব্যবসায়ীদের।
জাফলং স্টোন ক্রাসার মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত জানান, পাথর বিক্রি করতে না পারায় মিল মালিকদের পক্ষে মিল সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের মজুরি দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাথর ব্যবসায়ী, মিল মালিক এবং কোয়ারি সংশ্লিষ্ট শ্রমিকসহ সবাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া অবরোধ-হরতালে নাশকতার আশঙ্কায় পরিবহন মালিকরা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, কোনো চালকই এ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ঝুঁকি নিতে চান না। তাই তারা রাস্তায় গাড়ি বের করছেন না।
এদিকে, পাথর স্থবিরতা নেমে আসার কারণে পাথর উত্তোলন, পরিবহন ও ভাঙার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। আর এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
শ্রমিকরা বলেন, আমরা খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিক। কোনো রকম কাজ করে দু-বেলা খেতে পারলে আমাদের আর কিছুর দরকার নেই। আমরা হরতাল- অবরোধ কিছু বুঝিনা।
খেটে খাওয়া এসব সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করেই অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করার দাবি তাদের।
বাংলাদেশ সময় : ১০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫