ঢাকা: বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক এম আমানউল্লাহর দুর্নীতি অনুসন্ধানে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) এহসানুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পরিচালক এম আমান উল্লাহ, তার স্ত্রী তাজনিন আমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। অনেকটা গোপনীয়তায় এদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দুদক।
দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান পরিচালক এম আমানউল্লাহ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালীন নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজ ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকার ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতার বা কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সবিলিটি (সিএসআর) তহবিল নিয়েছেন। ব্যাংকটির বর্তমান এমডি এহসানুল হক ওইসময়ে একই পদে ছিলেন। আমানউল্লাহর বিষয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানের পাশাপাশি দুদক এহসানুল হক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দুদক জানতে পেরেছে, ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যাংক সিএসআর খাতে মোট ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা দিয়েছে। যার মধ্যে এম আমানউল্লাহ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়েছেন ৪৩ শতাংশ অর্থ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক চিঠিতে এই অর্থ ব্যাংকে ফেরত এনে জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, গত বছর ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংক এম আমানউল্লাহর আমান গ্রুপ অব ফাউন্ডেশনের চ্যারিটেবল কিডনি ডায়ালিসিস হাসপাতালের নামে এক কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার এই সিএসআর তহবিল অনুমোদন করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল সরেজমিনে ফাউন্ডেশনের নামে কোনো জমি খুঁজে পায়নি। পরে এ বিষয়ে ২০ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকের কাছে তথ্য চাইলে ২৭ আগস্ট তার জবাব দেওয়া হয়। সেখানে দেখা যায়, ২১ আগস্ট আমানউল্লাহ ৮৬৪ অযুতাংশ (৫.২৪ কাঠা) জমি দান করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরের দিন এই দান করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠিতে বলেছে, ‘ফলে পরিলক্ষিত হয় যে অনুদান প্রদানকালে ফাউন্ডেশনের নামে কোনো জমি না থাকলেও নিষ্কণ্টক জমি রয়েছে মর্মে মিথ্যা ঘোষণা প্রদান করা হয়। পরে সিএসআর-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করলে তড়িঘড়ি করে একটি দানপত্র দলিল সম্পাদন করা হলেও ফাউন্ডেশনের নামে নামজারি বা খাজনা প্রদানসংক্রান্ত কোনো কাগজ পাওয়া যায়নি। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই এলাকায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অনুদানের অর্থে একটি হাসপাতাল ভবন নির্মিত হলে এর পাশের প্লটগুলোর মূল্য বাড়বে এবং আমানউল্লাহ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জনাব আমানউল্লাহ কর্তৃক মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ব্যাংকের সিএসআরের টাকায় ব্যক্তিগত সুনাম সৃষ্টিসহ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে এই অনুদান প্রদানে প্রভাবিত করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে অসমাপ্ত হাসপাতালের ব্যয় নির্বাহের জন্য আরও অর্থ বের করে নেওয়ার পথ সুগম করা হয়েছে, যা অনৈতিক। ’
ঘটনার সময় এহসানুল হক ব্যাংকটির এমডির দায়িত্ব পালন করায় দুদক অনুসন্ধানের প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমানউল্লাহর এ কাজে এমডি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কি না বা তার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না দুদক তা খতিয়ে দেখছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫