ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে টানা হচ্ছে না বিদ্যুৎ লাইন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫
পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে টানা হচ্ছে না বিদ্যুৎ লাইন ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র।   সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তি ও যানবাহন চলাচালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তা বন্ধ হয়ে যায়।


 
সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাতে করে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে টানা না হয় সে জন্য  পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে যাতে কয়লা ভিত্তিক সঞ্চালন লাইন না হয় সেই লক্ষ্যে মাত্র চারটি রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণের বিষয়ে ডিপিপি’তে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
সূত্র জানায়,  পিজিসিবি চেয়েছিলো যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ন্যায় পদ্মা নদীতে নির্মিত সেতুর ওপর দিয়ে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হোক। তবে সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে না। তবে পদ্মাসেতু থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পানির নীচ দিয়ে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।
 
এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম, পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে কয়লা ভিত্তিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হচ্ছে না। তবে সেতু থেকে দেড় কিলোমিটার পানির নীচ দিয়ে এই লাইন স্থাপন করা হবে। এতে করে আমরা আমাদের নিজের খরচে অতিরিক্ত সাতটি  টাওয়ারের ফাউন্ডেশন নির্মাণ করবো। যাতে করে সেতুর ওপর দিয়ে কোনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না করা হয়। আর সেইভাবেই আমরা টেন্ডার করেছি। আমরা নকশা অনুযায়ীই এই কাজ করতে যাচ্ছি। ’
 
কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তি প্রসঙ্গে পিডি বলেন, সেতু সংলগ্নে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে যখন আপতত্তি ছিল তখন আমি ছিলাম না। আর বর্তমানে এই নিয়ে নতুন কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না। ’
 
সর্বশেষ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প ও শক্তি বিভাগ) এস এম গোলাম ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে প্রকল্পের ওপর প্রকল্প প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়েই কয়লা ভিত্তিক ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে না। এর ফলে পদ্মা সেত‍ু কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব খরচে পদ্মা সেতু সংলগ্নে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের অংশ হিসেবে নদীতে আরও ৭টি টাওয়ারের ফাউন্ডেশন নির্মাণ করে দেবে।

তবে যদি সেতুর ওপর দিয়ে যদি কয়লাভিত্তিক সঞ্চালন লাইন হয় তবে ট্রেন ও পরিবহনে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
 
প্রকৌশলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে খোলা লাইন করলে নানা সমস্যা হবে। শুধু কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নয় যে কোনো খোলা তার থাকলেই সমস্যা হবে। যেমন যানবাহন ও ট্রেন চলাচলে বেশি সমস্যা হবে। তবে পানির নীচ দিয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করলে কোনো সমস্যা হবে না। ’
 
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ‘আমিন বাজার- মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতুর ‍ওপর কয়লা ভিত্ত্বিক সঞ্চালন লাইন হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। জুলাই ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ মেয়াদের মধ্যেই এই লাইন নির্মাণ করতে সময় চেয়েছে পিজিসিবি।
 
মংলায় ১২৩০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েট করা হবে। ভবিষ্যতে মাওয়ায় স্থাপিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েট করার ব্যবস্থা করা হবে। এর পরে ঢাকা ও মংলার মধ্যে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন কাঠামো নির্মাণ করা হবে।
 
মংল‍ায় উৎপাদিত কয়াল ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ আমিনবাজার হয়ে নগরীতে প্রবেশ করবে। সেই লক্ষ্যে মংলা থেকে আমিন বাজার পযর্ন্ত প্রায় ১৬৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। অপরদিকে সেতুর পাশেই ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার রিভার ক্রসিং লাইন নির্মাণ করা হবে।
 
আমিনবাজারে ৪০০ কেভি ৩.৫২০ এমভিএ উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গে পিজিসিবি’র এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর ন্যায় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের একাধিক বার কথা হয়েছে। তবে সর্বশেষ পদ্মাসেতু থেকে দেড় কিলোমিটার দূর দিয়ে এই লাইন হচ্ছে। ’
 
প্রকল্পের ডিপিপি’তে ৩১ কোটি ১৯ লাখ টাকা আন্তর্জাতিক পরামর্শকের বেতন বাবদ রাখা হয়েছে। অপরদিকে নগরীর আমিনবাজার এলাকায় ডিপিপি’তে ২০ একজর জমির সংস্থান রাখা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় গাড়ি ও মোটরবাইক কেনা হবে। ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে মংলা থেকে পদ্মাসেতুর পাশ দিয়ে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।