রাজশাহী: হাসিমুখে ফুলের দোকানে ঢুকলেও দিনের শেষে মুখগুলো কালো হয়ে যায়। রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতায় হাস্যোজ্জ্বল এই ফুলগুলোও যেন অভিমানে ও ক্ষোভে মুখ ভারী করে রাখে।
বাঙালির বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগের দুই দিনে রাজশাহীর বাজারে আনা হয়েছে, অন্তত ছয় লাখ টাকারও বেশি ফুল। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এ সব ফুল আনা হয়েছে, যশোরের ঝিকরগাছা ও গাজীপুর জেলা থেকে।
কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালের সহিংস কর্মসূচিতে ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেছে ফুল ব্যবসায়ীদের। বিক্রি না হওয়ায় তাদের চোখের সামনেই ম্লান হয়ে যাচ্ছে দোকানের ফুলগুলো। তাই, মন ভালো নেই শহরের ফুল ব্যবসায়ীদের। এদিকে, ব্যবসার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে অনেক।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা অবরোধ ও হরতালে ফুল ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দোকানে ফুল আনা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে না। থরে থরে সাজিয়ে রাখা রঙিন ফুলগুলো যখন এমনিতেই ঝরে যাচ্ছে, তখন ব্যবাসায়ীদের মুখও মলিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বেশি দামে কেনা ফুল কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ফলে তারাও চোখে সর্ষে ফুল দেখতে শুরু করেছেন।
বসন্তবরণের আগে বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর ফুল বাজারে গিয়ে এই করুণ চিত্র দেখা গেছে। শীত মানেই উৎসবের মৌসুম। তারপর ঋতুরাজ বসন্তের আগমন, ভালোবাসা দিবস এবং মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। এ কারণে এই সময়টাকে বলা হয় ফুল বিক্রির ভরা মৌসুম। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। অবরোধে সরবরাহ কম থাকাসহ নানা কারণে ফুল ব্যবসায় ধস নেমেছে। ফুল ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা এসব মানুষ এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে বলে জানালেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটের ফুল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, বছরের মধ্যে এই সময়ই ব্যবসা হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবার তেমনটি হচ্ছে না। এর ওপর দোকানে বেশিদিন ফুল রাখা যায় না। প্রতিদিন বিক্রি করতে না পারলে ফুলের সতেজতা নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি জানালেন, জেলায় ফুল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই, অধিকাংশ সময়ই বাধ্য হয়ে কমদামে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে। স্বাভাবিক সময় ২০টি মালার এক ঝোপ গাঁদাফুল একশ ৫০ থেকে দুইশ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে বর্তমানে সমপরিমাণ ফুল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও অনেকে নিতে চাচ্ছেন না।
নিউমার্কেটের এই ব্যবসায়ী বলেন, বিক্রি না হওয়ায় অনেক ফুল পচে নষ্ট হচ্ছে। আর নষ্ট হলে পুরোটাই ক্ষতি। কিন্তু অল্পদামে বিক্রি করে দিলে অন্তত চালান টিকছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে একটি লাল গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। রঙিন গোলাপ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাগজে মোড়ানো ২০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১০ টাকা, রঙিন গ্ল্যাডিওলাস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ফুলের তোড়া সর্বনিম্ন সাড়ে তিনশ থেকে এক হাজার টাকা, জারবেরা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
এদিকে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে রাজশাহী মহানগরীতে দেড় শতাধিক ফুলের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী ফুলের দোকান রয়েছে অর্ধশত। নানা আশঙ্কার মধ্যেও বিশেষ দিনগুলোকে সামনে রেখে এসব ফুলের দোকানে বর্তমানে শোভা পাচ্ছে, বাহারি রঙ আর নামের ফুল। ফুলের স্নিœগ্ধ সুবাসে দোকানের চারপাশ মৌ মৌ করছে। সবার পছন্দের কথা মাথায় রেখে লাল ও সাদা গোলাপ, জুঁই, চামেলি, জারবেরা, রজনীগন্ধা, কালার গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এবার ফুল আনা হয়েছে, যশোরের ঝিকরগাছা ও গাজীপুর জেলা থেকে।
মহানগরীর সাহেব বাজারের ফুল ব্যবসায়ী সুশীল চন্দ্র জানান, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে এবার ছয় লাখের বেশি টাকার ফুল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ফুল আট লাখ টাকার বেশি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা।
অবরোধ-হরতালে ব্যবসায় মন্দাভাব চললেও আগামী দিনে ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন সুশীল চন্দ্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫