বগুড়া: দেশে চলমান হরতাল-অবরোধে বগুড়ার ইজারাদাররা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। বাজারে পর্যাপ্ত বেচাকেনা এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় ইজারাদারদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
স্থানীয় হাটে নিয়ে আসা বিভিন্ন পণ্যের বিক্রেতারা জানান, বিক্রি করলেও লোকসান, না করলেও লোকসান। বিক্রি করে লোকসানের মাত্রাটা কমানোই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।
অপরদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতারা বলছেন, দাম কম পেলেও গাড়ি ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বেশি হওয়ায় যতসামান্য লাভ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আর হাট কর্তৃপক্ষ জানান, হরতাল-অবরোধে এক মাসেই তাদের মাথায় হাত।
সম্প্রতি, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বগুড়া-রংপুর সড়ক ঘেষে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান হাট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
হাটের টোল আদায়কারী কয়েকজন জানালেন, গাড়ি ভাড়া, পরিবহনে ঝুঁকি, সড়কে টহলরত পুলিশের অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ কয়েকটি কারণে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমন একেবারে কম। যে কারণে সবজির এই মৌসুমে হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে যে পরিমাণ টোল (টাকা) আদায় হতো, হরতাল-অবরোধের কারণে তার ১০ ভাগের এক ভাগ টাকাও আদায় করা যায়নি।
তরকারি হাটে টোল আদায়কারী মিঠু বলেন, হাটে তরকারি আমদানি এতটাই কম যে, তাদের দৈনিক বেতনের টাকাই হচ্ছে না। হাটের অবস্থা থেকে ইজারাদারকেও তারা এ বিষয়ে চাপ দিতে পারছেন না।
অপর আদায়কারী সাজু জানালেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ বছর হাটের অনেক লোকসান হবে। শুধু আলুর হাটটিই ডেকে নেওয়া হয়েছে ৪০ লাখ টাকায়। পুরো হাঁট নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়। শুধু হরতাল-অবরোধের কারণেই লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতারাও আমদানী কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেন সহজ ভাবেই। তারাও বলছেন রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধ অনেক ক্ষতি করছে মানুষের। আওয়ামী লীগ বা সরকারের উচিত দ্রুত দেশের মানুষের কথা ভেবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তাদের মতে, এ পরিস্থিতিতে পণ্য নিয়ে হাটে আসতে যেমন কষ্ট, তেমনি পণ্য কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া করে টহল পুলিশ সদস্যদের চাহিদা মিটিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতেও তেমনই কষ্ট। যে কারণে হাটে আমদানি অনেক কম। আমদানি কম বলেই বেচাকেনা কম। আর বেচাকেনা কম বলেই হাট কর্তৃপক্ষের লোকসানের হিসেব কষতে হচ্ছে।
হাটের ইজারাদার ও বগুড়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান লোকসানের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, পরিবেশ মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কি? তাকিয়ে আছি আগামী বছরের দিকে।
তিনি জানান, আগামী বছরের (বাংলার বছর) জন্য হাটটির ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। কিন্তু হরতাল-অবরোধে লোকসানের বিষয়টি উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করায় আগের দামেই (১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা) হাটটি পেয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫