ঢাকা: মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা বাবুল। তিনি উচ্চস্বরে প্রতিকেজি গরুর মাংসের দাক হাঁকছেন ৩৫০ টাকা।
এই বাজারে ৩৫ বছর ধরে মাংস বিক্রি করছেন তিনি। কিন্তু গরুর মাংসের কেজি ৩৫০ টাকা কোনো দিনই দাম হাঁকেননি বলে জানান বাবুল।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মাল(গরু) আহে কম। তাই মাংসের দাম চড়া। ৩৫০ টাকা দাম চাই কমতে কমতে যা হয়। তবে ৩৩০ টাকার কমে গরুর মাংস বিক্রি করলে ঘর থেকে গচ্চা(লোকসান) দেওয়া লাগবো। ’
শুধু বাবুল নয় নগরীর অধিকাংশ কাঁচাবাজারে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর পর থেকে সব ধরনের মাংসের দাম চড়া। জানা গেছে, পাঁচ জানুয়ারি ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দাম বেড়েছে মাংসের। হরতাল-অবরোধে নগরীতে খাসী, গরু, বকরি, ব্রয়লার, পাতিহাঁস, রাজহাঁস, দেশী ও পাকিস্তানি ককসহ সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম চড়া।
নগরীর মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মাংসের দাম বাড়ার পিছনে প্রধান কারণ তিনটি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, চামড়ার দাম কমে যাওয়া ও বাংলাদেশে ভারতীয় গরুর প্রবেশে কড়াকড়ি।
মাংস বিক্রেতারা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নগরীতে গরুর ট্রাক ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার কারণে মাংস বিক্রেতারা মাংসের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে তা পুষিয়ে নিচ্ছেন। অপরদিকে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশে কড়াকড়ি হওয়ার কারণে চড়া দামে দেশীয় গরু কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
টাউন হল কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা শরিফ বলেন, ডিসেম্বরের শেষের দিক থেইক্কা গরুর দাম চড়া। ইন্ডিয়ান গরু আহে না বলা যায়, দেশী গরু সম্বল। ২৭ হাজার টাকার গরু কিনা ৮০ কেজি মাংস আহে না। ২৬০০ টাকার চামড়া ১২০০ টাকায় ব্যচন লাগে। বেশি দামে মাংস বিক্রি না করলে চালান(লাভ) আহে না। ’
দাম বাড়ার কারণে মাংস বেচাকেনায়ও চরম প্রভাব পড়েছে কাঁচা বাজারগুলোতে। টাউন হলের মাংস বিক্রেতা মোহাম্মদ সাইদ বাংলানিউজকে বলেন, আগে ৩০ থেকে ২৫টা খাসী কাটা হতো এখন নামতে নামতে ৭টায় ঠেকছে। এখন দুই মণ গরুর মাংস বিক্রি করতে হিমশিম খাই। হরতালের আগে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ মণ মাংস বিক্রি করেছি। ’
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়ে গেছে চামড়ার দাম। এর প্রভাব খাসী ও বকরির মাংসেও পড়েছে। নগরীর জিগাতলা কাঁচাবাজারের প্রতিকেজি খাসী ৫৫০ ও বকরির মাংসের দাম ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাংস বিক্রেতা ওয়াজির আলম বাংলানিউজকে বলেন, খাসী ৫৫০ ও বকরি ৫০০। মালের (মাংস) দাম বেশি বেচাকেনা কম। মাল আহে গ্যারাম থাইক্কা। ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার ট্যারাক (ট্রাক) খরচা লাগে ১৮ থেইক্কা ২০ হাজার টাকা। ’
তিনি আরো বলেন, বকরির চামড়া এহন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করি। যা কয়দিন আগে ছিল ২৩০ টাকা থেকে ২৫০। খাসীর চামড়া বিক্রি করি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা যা ছিল ৩০০ থেকে ৩৩০। এর ফলে মালের দাম বেশি রাখতে হয়। বেশি দামে মাল না বিক্রি করলে চালান থাকতো না। ’
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছু কম আছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে দেশী মুরগি ও পাকিস্তানি ককের দামও চড়া।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ৭০০ গ্রাম ওজনের একহালি দেশী মুরগির দাম হাঁকা হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা। অপরদিকে একই ওজনের একটি পাকিস্তানি ককের দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
মুরগি বিক্রেতা সাইফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, দেশী মুরগি ও পাকিস্তানি ককের দাম চড়া। দ্যাশ গ্রাম থেইক্কা গাড়িগুড়ি আইতে পারে না। মার্কেটে ক্রেতারাও আইতে পারে না। তিন দিনে ৩৫ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি করছি। ’
হরতাল-অবরোধে নগরীতে যখন খাসী, গরু, বকরি, দেশী ও পাকিস্তানি ককের দাম চড়া, তখন বসে নেই পাতিহাঁস ও রাজহাঁসের দাম। এক কেজি ওজনের কিছু বেশি একটি পাতিহাঁস কিনতে গেলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ৪০০ টাকা। অপরদিকে ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি রাজহাঁস খেতে হলে ক্রেতাকে খরচা করতে হবে পাক্কা ১১’শ থেকে ১২’শ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫