ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভালো নেই যশোর রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫
ভালো নেই যশোর রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে পুঁজি হারাতে বসেছে যশোরের রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চামড়ার মোকাম রাজারহাটে পাইকারি ক্রেতা ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা না আসার কারণে বেচাকেনায় ধস নেমেছে।



স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হরতাল-অবরোধের আগে মোকামের প্রতিহাটে (শনিবার) কমপক্ষে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার চামড়া বেচাকেনা হতো। সেখানে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকার চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। এতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে বাজার সংশ্লিষ্ট খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের।

রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা এই হাটে চামড়া বিক্রি করেন।

এসব খুচরা বিক্রেতাদের কেন্দ্র করে রাজারহাটে ৪০ থেকে ৫০টি স্থায়ী আড়ৎ গড়ে উঠেছে। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, নাটোর, পাবনা ও ঈশ্বরদী এলাকা থেকে অন্তত ২০জন পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা রাজারহাটে আসেন।

তবে, হরতাল-অবরোধের কারণে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা মোকামে আসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে ঢাকায় চামড়া পাঠাতে গেলে যানবাহনের ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। তবুও ভালো দাম পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। এতে খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা পড়েছেন মহাবিপাকে।

সাতক্ষীরার বাসিন্দা ও রাজারহাট চামড়া মোকামের স্থায়ী আড়ৎদার মহিউদ্দিন বিশ্বাস মহিন বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির হাটে যেসব চামড়া পাইকারি ব্যবসায়ীদের বাকিতে দিয়েছি। সেসব মহাজনরা ‘হরতাল-অবরোধে বিদেশি বায়ার আসছে না’ অজুহাত দেখিয়ে ঠিকমতো টাকা দিচ্ছে না। এতে প্রত্যেক আড়ৎদার ব্যাংক লোনের টাকা না দিতে পেরে সুদ গুণতে বাধ্য হচ্ছে।

আগে তিনি প্রতিহাটে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার চামড়া কেনাবেচা করতেন। বর্তমানে ৫০ হাজারও কেনাবেচা হচ্ছে না।

চামড়া কিনতে আসা আলীম অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার বাহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, অবিলম্বে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে চামড়া ব্যবসায়ীরা পথে বসবে। কারণ, বিদেশ থেকে বায়াররা আসছে না বলে মূল বাজারে কেনাবেচা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের আগে তারা ভালো মানের চামড়া ১১০ থেকে ১২০ টাকা ফুট কিনেছেন। সেখানে বর্তমানে কিনছেন সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ফুট। এছাড়াও পূর্বের বাজারে মধ্যম শ্রেণির চামড়া ৯০ থেকে ১০০ টাকা ফুট বিক্রি হলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

তিনি জানান, একটি বড় গরুতে কমপক্ষে ২৫ ফুট চামড়া হলে প্রতিপিসে দাম কমেছে ১০০০ টাকা।

শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজারহাট চামড়া মোকামে আসা খুচরা ব্যবসায়ী ঝুমঝুমপুরের টুকু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জোন (কামলা) দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। দিন পাঁচেক আগে একটি বড় গরুর চামড়া ২২০০ টাকায় গ্রাম থেকে কিনেছি।

ওই চামড়া পরিস্কারের পর আড়াই কেজি লবণ দিয়ে বিক্রি উপযোগী করে বাজারে আনলাম। তবে ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ দাম বলছে ১৭০০ টাকা। এতে লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুণতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।

মণিরামপুরের শ্যামকুড় গ্রামের অর্জুন দাস বাংলানিউজকে জানান, তিনি ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ। পৈত্রিকসূত্রে বাবার চামড়া ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চামড়া ব্যবসা করে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণ-পোষণ যোগান তিনি।

তবে, হরতাল-অবরোধে ব্যবসা মন্দার কারণে খুব বিপদে পড়েছেন। একদিকে, এনজিও কিস্তি। অন্যদিকে, সংসারের ঘাঁটি টানতে গিয়ে পুঁজি হারাতে বসেছেন তিনি।

রাজারহাট চামড়া বাজারের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নিলাম মূল্যে ৩২ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য এ হাট ইজারা নিয়েছেন তিনি। হরতাল-অবরোধের আগে প্রতিহাটে ৫ হাজার পিসের ওপরে চামড়া বেচাকেনা হতো।

এতে প্রতিহাটে তারা কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় করতেন। সেখানে বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি আয় হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।