ঢাকা: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চাহিদা বেশি হওয়ায় আগামি ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ সিমেন্ট শিট তৈরির কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশিয় কোম্পানি আনোয়ার সিমেন্ট শিট।
শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ডিসিসিআই মিলনায়তনে আনোয়ার সিমেন্ট শিটের লোগো উম্মোচন ও আনুষ্ঠানিক বিপণন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন।
মনোয়ার হোসেন জানান, সুলভ ও দীর্ঘস্থায়ী গৃহ নির্মাণ শিটের মধ্যে আনোয়ার সিমেন্ট শিট সেরা। দেশিয় চাহিদা মিটিয়ে এখন বিশ্ববাজারেও রপ্তানি হচ্ছে এ শিট। গুনগত মান সম্পন্ন হওয়ায় ভারত, ব্রাজিল, মালেশিয়া, কাজাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে আনোয়ার সিমেন্ট শিট।
বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট শিটের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে আনোয়ার সিমেন্ট শিট কোম্পানি তৈরি করে এক লাখ মেট্রিক টন।
এ শিট দীর্ঘ ২৫ বছর থেকে উৎপাদন ও বিপণন হলেও শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে লোগো উম্মোচন ও বিপণন উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি আনোয়ার সিমেন্ট শিট লিমিটেড পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সিমেন্ট শিট উৎপাদনকারী সিঙ্গেল লাইন ইউনিট বলে জানান মনোয়ার হোসেন।
মনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রাম বাংলার আবাসন সমস্যা নিরসনে আনোয়ার গ্রুপ দীর্ঘস্থায়ী এ শিট বাজারে এনেছে। পাঁচ স্তর বিশিষ্ট এ শিটের ওপরের তিনটি স্তর বাইরে তাপ প্রতিফলন করে ও নিচের দুইটি স্তর ভেতরের তাপ ধরে রাখে। ফলে ঘর থাকে গরমে তুলনামূলক ঠাণ্ডা ও শীতে গরম।
ISO-393:1964 অবলম্বনে তৈরি করা হচ্ছে আনোয়ার সিমেন্ট শিট। তুলনামুলক আনোয়ার সিমেন্ট শিটের দাম কম বলে ঢেউটিনের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম খরচে বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব বলে দাবি করেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এ শিট ব্যবহারে গ্রামীণ আবাসন খাতে বছরে এক থেকে দেড়শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলেও জানান তিনি।
এ শিট পোল্ট্রি শিল্পে আশির্বাদ বয়ে আনবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ টিন ব্যবহারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় না বলে হিট স্ট্রোকে গিটস রোগে প্রতিবছর ৩০ শতাংশ মুরগি মারা যায়। প্রতিবছর সাধারণ টিনের কারণে ক্ষতি হয় একশ ৩০ কোটি টাকা। আনোয়ার গ্রুপ ২৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণা করে দেখেছে যে, পোল্ট্রি শিল্পে সিমেন্ট শিট উপযোগী।
এ শিট ব্যবহারে পোল্ট্রি শিল্পে হিট স্ট্রোকে ৯০ শতাংশ মুরগির মৃত্যু কমানো সম্ভব। পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও ৩০ শতাংশ বাড়ানো যাবে।
সিমেন্ট শিট ব্যবহারে ঘরের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ছয় ডিগ্রি পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব। এ কারণে গ্রামভিত্তিক দেশগুলোতে গত ২৫ বছরে সিমেন্ট শিটের চাহিদা বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
২০১৪ সালে বিশ্বে সিমেন্ট শিট ব্যবহৃত হয়েছে ১৬ কোটি ৯ লাখ ১২ হাজার একশ ৭০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ভারতে ব্যবহৃত হয়েছে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের দেশেও এর ব্যবহার বেড়েছে।
মনোয়ার হোসেন জানান, লবণাক্ত আবহাওয়া সিমেন্ট শিটের কোনো ক্ষতি হবে না। এসিড বা কেমিক্যালে কোনো ক্ষতি না হওয়ায় যেকোন কারখানা ও প্ল্যান্টে ব্যবহার উপযোগী। ফলে আনোয়ার সিমেন্ট শিট যেকোন ঘর তৈরিতে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
মনোয়ার বলেন, আনোয়ার গ্রুপ গ্রামীণ গণমানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আমদানির বিকল্প পণ্য যোগ করছে।
আনোয়ার গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, অসম্ভব বলে কিছু নেই। সততা, নিষ্ঠা আর দেশপ্রেম থাকলে সব সম্ভব।
তিনি বলেন, আনোয়ার গ্রুপের ১৮০ বছরের অগ্রযাত্রায় আনোয়ার সিমেন্ট শিট তারই একটি প্রয়াস। আনোয়ার গ্রুপ সিমেন্ট শিটসহ বর্তমানে বাজারে ২৮টি পণ্য এনেছে।
বর্তমানে আনোয়ার গ্রুপ কর দেওয়ার ক্ষেত্রেও ১১তম স্থানে রয়েছে। নতুন এ শিল্পের মাধ্যমে আগামীতে ৭-৮তম স্থানে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে এ গ্রুপে প্রায় ১২ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করবে বলে জানান আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে আনোয়ার সিমেন্ট শিটের লোগো উম্মোচন, বিজ্ঞাপন প্রচার, গানে গানে এ শিটের গুণগান গাওয়া হয়। পরে ডিসিসিআই রুমে এ শিট দিয়ে তৈরি একটি ঘর উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন মেহমুদ, হোসেন খালেদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামসুল হুদা খান সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫