খুলনা: টানা অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রভাব পড়েছে খুলনার পাট শিল্পে। রফতানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারের সরবরাহ আদেশানুযায়ী পাট জাহাজীকরণ (শিপমেন্ট) করতে পারছেন না।
পাট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা-সহিংসতা দীর্ঘ হওয়ায় দেউলিয়া হওয়ার পথে এ খাতের ব্যবসায়ীরা। লোকসানের মুখে পড়ে দমবন্ধ অবস্থা।
পাটকল কর্তৃপক্ষ জানায়, হরতাল-অবরোধে স্থবিরতা নেমে এসেছে পাট শিল্পে। উৎপাদিত পণ্য রফতানি ও বিক্রি করতে না পারায় বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রেখে উৎপাদন কমাতে হচ্ছে। তাই অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা, ব্যাংক ঋণের সুদ গুণতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সদস্য আলম ফাইবারসের প্রোপাইটর মো. ফিরোজ আলম বাংলানিউজকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। বিশেষ করে কাঁচাপাট ব্যবসায়ীদের। পরিবহন সঙ্কটের কারণে কাঁচাপাট সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এমনিতেই স্বাভাবিক অবস্থায়ও পাট ব্যবসায় মন্দা চলছিলো। তার উপর টানা হরতাল-অবরোধে এ ব্যবসা আরো করুণ অবস্থায় চলে এসেছে। এতে আমাদের মতো কাঁচাপাট ব্যবসায়ীদের দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে ফিরোজ আলম বলেন, ব্যবসা না থাকলেও শ্রমিকদের বেতন, অন্যান্য খরচ ও ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বাভাবিক নিয়মে। ফলে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুণার শঙ্কায় আছেন অনেক ব্যবসায়ী।
বিজেএ সদস্য ও খুলনার পাট ব্যবসায়ী শরীফ মো. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, টানা হরতাল-অবরোধে পাট ব্যবসায় ধস নেমেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা রাজনীতি করি না। তারপরও রাজনীতির বলি হয়ে পথে বসছি। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে খুলনার পাট শিল্পে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে। পাট জাত পণ্য রফতানি করতে না পারায় পাটকল মালিক বা কর্তপক্ষের পুঁজি আটকা পড়েছে। তার সঙ্গে আমাদের পুঁজিও আটকে গেছে।
এসব ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনীতির স্বার্থে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
শিল্পাঞ্চল খ্যাত খুলনার সরকারি-বেসরকারি পাটকল ও ব্যবসায়ীরা পাটজাত পণ্য রফতানি করতে না পারায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পাশাপাশি বেকার হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী।
খুলনা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) অফিস সূত্র জানায়, খুলনার পাট ও পাট জাত পণ্য জাপান, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, চীন, ভারত, পাকিস্তান, বুলগেরিয়া, পর্তুগাল, রাশিয়া, তুরস্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, চেক রিপাবলিক, কানাডা, জার্মানি, কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও বেলরুশসহ বিশ্বের ২৪-২৫টি দেশে রফতানি হয়। কিন্তু এসব পাটকল থেকে এখন রফতানি একেবারে বন্ধের উপক্রম। হরতাল-অবরোধের কারণে একদিকে সময়মতো এলসি খোলা যাচ্ছে না, অন্যদিকে বায়াররাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলে ১৯ হাজার মেট্রিক টন পাট জাত পণ্য মজুদ রয়েছে, যা রফতানির অপেক্ষায় রয়েছে।
খুলনা-যশোর অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৫টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৯টি ও বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৬টি।
বিজেএমসি খুলনার লিয়াজো কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, খুলনাঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় সাতটি ও যশোরে দুটি।
তিনি বলেন, টানা হরতাল-অবরোধে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলে ১৯ হাজার মেট্রিক টন পাট জাত পণ্য রফতানির অপেক্ষায় মজুদ রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাট শিল্পে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উৎপাদন কম হওয়া ও মিল বন্ধ থাকায় স্থায়ী শ্রমিকদের যেমন বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে, তেমনি অস্থায়ী শ্রমিকরা বেকার পয়ে পড়ছেন।
বাংলাদেশ সময় : ১০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫