ঢাকা: দেশের ৫৩ জেলার ২১৭ উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৪২ লাখ ৪৪ হাজার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনলো সরকার। এজন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড প্রজেক্ট ২য় পর্যায়(এসইএসপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উপবৃত্তি দেওয়া হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর।
মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এটিসহ পাঁচ হাজার ৩৯৭ কোটি ৭ লাখ টাকার ছয় প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
একনেক সভা শেষে ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ক্ষেত্রে মাসিক উপবৃত্তি হবে ১০০ টাকা। ৮ম শ্রেণির ক্ষেত্রে তা ১২০ টাকা এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ক্ষেত্রে মাসিক উপবৃত্তি দেওয়া হবে ১৫০ টাকা। অপরদিকে, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক ১৫ টাকা হিসেবে টিউশন ফি দেওয়া হবে। ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ক্ষেত্রে তা ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও এসএসসি পরীক্ষা ফি বাবদ বার্ষিক এককালীন ৭৫০ টাকা করে দেওয়া হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রতি শ্রেণিতে মোট ছাত্রীর ৩০ শতাংশ এবং মোট ছাত্রের ১০ শতাংশ এ উপবৃত্তি পাবে।
উপবৃত্তির প্রধান প্রধান শর্ত সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, উপবৃত্তির যোগ্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকের জমির পরিমাণ ৭ ডেসিমেলের নিচে এবং বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বার্ষিক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। ৮ম ও ৯ম শ্রেণির ক্ষেত্রে তা ৪০ শতাংশ। আরেকটি শর্ত হলো এসএসসি অথবা দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে অবিবাহিত থাকতে হবে।
উপবৃত্তি বিতরণের প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়টিও পরিকল্পনামন্ত্রী এ সময় স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং বা বিকাশ বা অন্য কোনো সহজ পদ্ধতিতে সরাসরি যোগ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে এ উপবৃত্তি প্রদান করা হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, অর্থের অভাবে কারো লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয়ে যায়, সে বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করতে চায়। যে পর্যন্ত আমরা শতভাগ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পারবো ততোদিন পর্যন্ত এ প্রকল্পটি চলমান থাকবে। আমরা আশা করছি, এ প্রকল্পটি চলমান থাকলে মাধ্যমিক পর্যায়ে ড্রপআউটের হার কমে আসবে।
বর্তমানে সরকার সারাদেশে ৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের উপবৃত্তি কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও গত একনেক সভায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আরো একটি উপবৃত্তি সংক্রান্ত প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিকে একনেক সভায় এটিসহ পাঁচ হাজার ৩৯৭ কোটি ৭ লাখ টাকার ছয় প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ৪ হাজার ৯১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ৪৫৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি নতুন ও তিনটি পুরোনো।
এর মধ্যে ‘ইন্সটালিয়েশন অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর টিজিটিডিসিএল ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় সভায়। মোট ৭১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
একনেক সভায় ‘ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পেরও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া ‘বৃহত্তর ফরিদপুর গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি পুরোনো, ২০০৯ সালে এটি শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পও সংশোধিত আকারে একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫
** ৫৩৯৭ কোটি টাকার ছয় প্রকল্প অনুমোদন