ঢাকাঃ পোশাকখাতে জানুয়ারি মাসে যে অর্ডার আসার কথা ছিলো তা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা চলমান থাকলে মে মাস থেকে অনেক কারখানাই কর্মশূন্য হয়ে পড়বে।
মঙ্গলবার(১৭ ফেব্রুয়ারি’২০১৫)সকালে তেজগাঁওয়ে হামিম গ্রুপ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে তিনি এসব কথা বলেন।
আর পোশাকখাতের খারাপ অবস্থা আসন্ন ২০১৫-১৬’র বাজেটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চলমান অবরোধ আর হরতালে সহিংসতায় নিরাপত্তার অভাবে ক্রেতারা পোশাক শিল্পে অর্ডার দিচ্ছে না। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর ব্যবসায় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব বাজেটে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের বাজেট ছিলো অর্ধলক্ষ কোটি টাকার যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকায়। এতে বড় অবদান রেখেছে দেশের পোশাক শিল্প। দেশের মোট রফতানির ৮০ শতাংশই আসে পোশাক শিল্প থেকে। এখনো দেশের কারখানাগুলোতে কাজ চলছে আমরা দেখছি। কিন্তু এই কাজের অর্ডার এসেছে ২০১৪ সালের শুরুতে। সেই অর্ডার এপ্রিলেই শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, মে মাস থেকে যে কাজ চলার কথা তার অর্ডার আসার কথা ছিলো জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু চলমান অবরোধে আমাদের দেশে তেমন কোনো ক্রেতাই আসেন নি। তারা নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকছেন। তাদের যেসব প্রতিনিধি বাংলাদেশে আছেন তারাও কোনো কারখানা পরিদর্শনে যাচ্ছেন না নিরাপত্তার অভাব বোধ করার কারণে। ফলে কারখানাগুলোকে তারা আর অর্ডার দিচ্ছে না।
পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি ভারত, ভিয়েতনামে যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের দেশে ক্রমশ কমতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি পজেটিভ থেকে নেগিটিভের দিকে এগুচ্ছে। গত বছরের শুরুতে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিলো ১১ শতাংশ। অথচ তা কমে দুই শতাংশে চলে এসেছে। এতে করে যে শুধু পোশাক শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা কিন্তু নয়। পুরো অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের রূপান্তর করার লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋনের পরিমাণও বাড়বে বলে করছেন হামিম গ্রুপের এমডি। তিনি জানান, বর্তমান হরতাল অবরোধ চলমান থাকলে ব্যবসায়ীরা তাদের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন না। অর্ডার আসবে না। কাজ বন্ধ
হয়ে যাবে। আর দেশের বেশির ভাগ গার্মেন্টের ব্যাংক লোন নিয়েই কাজ করতে হয়। কাজ না করতে পারলে তারা লোন কী করে পরিশোধ করবে। ফলে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ওয়ালমার্ট, এইচএন্ডএমসহ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় ক্রেতাদের কোনো সুখবর ব্যবসায়ীরা দিতে পারছে না। এর ফলে একদিকে দেশীয় উদ্যোক্তারা যেমন হতাশ হচ্ছেন ঠিক তেমনি আস্থা হারাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বলেও মন্তব্য
করেন এ কে আজাদ।
হরতাল অবরোধে ব্যবসায় বাণিজ্যে ক্ষতি হওয়া মানেই দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়ে আসা বলে মনে করছেন এফবিসিসিআই এর এই সাবেক সভাপতি।
তিনি বলেন, প্রতি বছর দেশের নতুন প্রায় ২০ লাখ মানুষ প্রবেশ করে কর্মবাজারে। তাদের ৬০ শতাংশের কর্মসংস্থান করে থাকে বেসরকারি খাত। এখন ব্যবসায় বাণিজ্যবন্ধ হয়ে গেলে বেকারের সংখ্যা চরম আকার ধারণ করবে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের স্বার্থে অর্থনীতির স্বাথে সমঝোতায় আসা উচিত বলে মনে করেন এ কে আজাদ।
তিনি বলেন, সরকারকে কঠোর হস্তে যেমন সহিংসতা দমন করা উচিত ঠিক তেমনি আলোচনার পথও খোলা রাখা উচিত। দেশের সহিংসতা নিয়ে আমাদের প্রতি মুহুর্তে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কছে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
পোশাক শিল্পের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংকিং খাতসহ সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তার কথায় উঠে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫