পাইকারি বাজার ঘুরে: রাজধানীর ফার্মের মুরগির পাইকারি বাজারগুলোতে বিকিকিনি, সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। দামের সঙ্গে কমেছে কর্মসংস্থানও।
বুধবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বৃহৎ ফার্মের মুরগির কাপ্তান, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন মুরগির বাজার ঘুরে এমনই তথ্য পাওয়া গেল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে এসব বাজারে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানালেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সকাল ৬টার দিকে কাপ্তান বাজারে গিয়ে দেখা গেলো ফার্মের মুরগির বেচাকেনা প্রায় শেষের দিকে। অথচ সকাল ৯টা পর্যন্ত পুরোদমে চলে বেচাকেনা।
ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফার্মের মুরগির সরবরাহ। পাইকার, আড়তদার, ক্রেতা, বিক্রেতা ও দিনমজুরের ব্যস্ততায় মুখর হয়ে থাকতো যে বাজার, সেই বাজারে নেই কোনো ব্যস্ততার চিত্র।
কাপ্তান বাজারের সানজিদ পোল্ট্রি হাউসের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন এ বাজারে ১০০ থেকে ১১৫টি পিকআপ ভ্যানের প্রতিটিতে করে দুই থেকে তিন হাজার পিস ফার্মের মুরগি আসতো। প্রতিটি ভ্যানে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের মুরগি থাকে।
এ হিসাবে আগে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হতো এখানে। কিন্তু এখন একেবারে বিপরীত অবস্থা। হরতাল ও অবরোধের কারণে এখন ৫০ থেকে ৬০টি পিকআপ ভ্যানে মুরগি আসে।
বাজার ঘুরে জানা গেল, অনেকের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার তথ্য। এর মধ্য তামান্না পোল্ট্রি ফার্মের সামছুল হকও আছেন। বগুড়া থেকে মুরগি নিয়ে গিয়ে ঢাকায় বিক্রি করতেন। এখন গ্রামের বাড়িতে (বগুড়া) অলস সময় কাটাচ্ছেন। মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা হয়। এসময় তিনি বলেন, ;‘একেতো ব্যবসা হচ্ছে না। তার ওপর ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছিল। তাই দোকান ঘর বন্ধ করে বাড়িতে বসে আছি। ’
তবে শুধু ফার্মের মুরগি নয়, সব ধরনের মুরগির কেনাবেচাতে একই অবস্থা বলে জানান সোনালী মুরগির ব্যবসায়ী আরজু শিকদার। প্রায় ৩০ বছর ধরে মুরগির ব্যবসা করে আসছেন তিনি। আরজু শিকদার বলেন, ‘আমার ব্যবসা-জীবনে এতো খারাপ অবস্থায় আগে কখনো পড়িনি। ’
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, কাপ্তান বাজারে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। এ-মুহূর্তে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র দেড় হাজারের মতো শ্রমিক।
কাজ না পেয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আসেন ধোলাইপাড় এলাকার রফিকুল। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রতিদিনের আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। একদিন কাজ পেলে অন্যদিন পাই না। কিন্তু বাজার তো করতেই হয়, আমাদের তো গোছানো টাকা নেই। কাজ না পেলে আমরা খাবো কি, এর উত্তর কেউ দেয় না। ’
মুরগি বিক্রেতা খোকন জানান, বগুড়া, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, যশোর, জয়পুরহাট, খুলনা, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাপ্তান বাজারের উত্তর পাশে রাত ১০টার পর থেকে মুরগি আসা শুরু হয়। এসময়ে এ এলাকায় বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু এখন আর সেই চেহারা নেই।
তিনি বলেন, আজ (বুধবার) ফার্মের মরগি প্রতিকেজি ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১২২ থেকে ১২৫ টাকা দরে। দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি হতো।
বেলা ১০টার দিকে কারওয়ান বাজারের পাইকার রাশেদ দেওয়ান বাংলানিউজকে জানান, আগে তিনি প্রায় পাঁচ থেকে ছয়’শ মুরগি বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন আড়াই’শ মুরগি বিক্রি হয়। এভাবে চলতে থাকলে অনেক বেশি ক্ষতির মুখের পরতে হবে।
এছাড়া রাজধানীর কচুক্ষেত, মালিবাগসহ বিভিন্ন পাইকার বাজারেও ফার্মের মুরগির একই অবস্থা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫