ঢাকা: মালয়েশিয়ায় গত পাঁচ বছরে মাত্র ৩টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বাংলাদেশে এক মাসেই পাঁচ হাজারের বেশি ট্রান্সফরমার পুড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সকাল-বিকেল আতশবাজির মতো ফুটছে ট্রান্সফরমার। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়াবহ কাহিনী। ওভার লোড ও নিম্নমানের ট্রান্সফরমারের কারণে এই বিপর্যয়।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দেশীয় একাধিক কোম্পানি ট্রান্সফরমার সরবরাহ করছে। একটি কোম্পানি তার মোট উৎপাদন ক্ষমতা যতো তার চেয়ে দ্বিগুণ ট্রান্সফরমার সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, পরে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ওই কোম্পানিটি চীন থেকে নিম্নমানের ট্রান্সফরমার এনে তাদের লোগো মেরে সরবরাহ দিয়েছে। একটি ঘটনা ধরা পড়লেও এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
ওই ঘটনায় ধরা পরার পরও রহস্যজনক কারণে বিষয়টি ধামা চাপা পড়ে যায়। তবে ট্রান্সফরমারের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা ট্রান্সফরমারের আদর্শ কোয়ালিটি পরিমাণ নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করেছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রয়োজন হলে তাদের ওভারলোডেড ও নষ্ট ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করে। কিন্তু একই স্থানের ট্রান্সফরমার কোন মাসে ৩বার পর্যন্ত পুড়ে যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
নিম্নমানের পাশাপাশি ওভারলোডের কারণে বিপুল সংখ্যাক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হচ্ছে। বিদ্যু বিভাগের এক হিসেবে দেখা গেছে গত আগস্ট মাসে ৪ হাজার ৪৩টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের রয়েছে ৩ হাজার ৮০৮টি।
ওভার লোডেড হয় মুলত দু’টি কারণে। একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী কোন রকম জানান না দিয়েই নিজের ইচ্ছামতো ফ্রিজ এয়ার কুলারের মতো ভারি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস স্থাপন করছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে কিছু অসাধু কর্মচারী নিয়ম থাকলেও জরিপ না করেই লোড বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ দিচ্ছে। এতে ওভার লোডেড হয়ে পড়ছে ট্রান্সফরমার। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় পৌনে এক লাখ ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জারিকৃত পরিপত্রে বছরে অন্তত তিনবার ট্রান্সফরমারের লোড পরিমাপ, উপযুক্ত উপকরণ দিয়ে ট্রান্সফরমারের গ্রাউন্ডিং নিশ্চিত করা, মানসম্মত ট্রান্সফরমার স্থাপন, সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির জন্য স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন নিশ্চিত করা, প্রতিটি বিতরণ কোম্পানির নিজস্ব ট্রান্সফরমার মেরামত ও ওয়ার্কশপ থাকা এবং নিজস্ব ওয়ার্কশপে প্রয়োজনীয় রুটিন টেস্ট ও মেরামত কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রে ট্রান্সফরমারের হালনাগাদ লোড না জেনে কোনো নতুন সংযোগ না দেওয়ার জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে ওভারলোড ট্রান্সফরমারের সংখ্যা কমিয়ে এনে ট্রান্সফরমারের নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম নিশ্চিত করার কথা বলা হয় পরিপত্রে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, বিতরণ পদ্ধতি ও ট্রান্সফরমার রক্ষণাবেক্ষণে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ না করায় সরকারের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ট্রান্সফরমার পুড়ে যাচ্ছে।
এতে একদিকে যেমন নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপনে সরকারের অর্থব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ হীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আমরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫