ঢাকা: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই- এর ২০১৫-১৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ২১ মে অথবা ২৩ মে। এরইমধ্যে অধ্যাপক আলী আশরাফকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৫-১৭ মেয়াদের জন্য এফবিসিসিআই’র সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে। আর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে।
এফবিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, এবার সম্ভাব্য সভাপতির তালিকায় রয়েছেন বর্তমান প্রথম সহ-সভাপতি ও চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ, আনিসুল হক ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।
এদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র পরবর্তী সভাপতি পদের প্রাথমিক লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ ও বর্তমান প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী।
এ দু’জনের মধ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বরিশাল চেম্বারের সদস্য হিসেবে এফবিসিসিআই’র নির্বচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে কোন কারণে মাতলুব আহমাদ নির্বাচন না করলে সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন মনোয়ারা হাকিম আলী।
বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন সরকারের সমর্থন না পেলেও ব্যবসায়ী মহলে তার বেশ যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বিরোধী পক্ষের পুরো সমর্থন পেতে পারেন। আর মাতলুব আহমাদ ও মনোয়ারা হাকিম আলী দু’জনই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জমজমাট ত্রিপক্ষীয় লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে আনিসুল হককে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে তিনি এফবিসিসিআই’র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে।
সাবেক আরেক সভাপতি একে আজাদের নির্বাচনে অংশগ্রণ না করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলে একে আজাদও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে লড়াই হবে চতুর্মুখী। আর এ লড়াই হলে বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন’র পাল্লাই সব থেকে ভারী হয়ে যাবে।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বরিশাল চেম্বারের সদস্য নন।
বিষয়টি নিয়ে রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) আবদুল মাতলুব’র মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ রিসিভ করেননি। মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে বরিশাল চেম্বারের সচিব মোহাম্মদ আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, বরিশাল চেম্বারে ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে আবদুল মাতলুব আহমাদ’র নাম নেই।
বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নির্বাচন করার লোক। এফবিসিসিআই’র নির্বাচন হলে অবশ্যই অংশগ্রহণ করবো।
আবদুল মাতলুব আহমাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাতলুব সাহেব কোন চেম্বারের সদস্য না। তবে নির্বাচনের আগে হয়তো কোন চেম্বারের সদস্য হয়ে যেতে পারেন।
মনোয়ারা হাকিম নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চাননি। আর একে আজাদের মোবাইল ফোন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেন নি। এমনকি মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়েও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এফবিসিসিআই’র নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, একটি পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে দুই বছর। অর্থাৎ প্রতি দুই বছর পর পর এফবিসিসিআই’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৫ জন এবং অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১৫ জন মোট ৩০ জন পরিচালক নিয়ে গঠিত হবে পরিচালনা পর্ষদ।
আর সংগঠনের সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, এক মেয়াদে সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে এবং প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে।
পরের মেয়াদে সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েশন থেকে এবং প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে চেম্বার থেকে। অর্থাৎ একবার চেম্বার থেকে সভাপতি নির্বাচিত হলে তার পরের বার সভাপতি নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েশন থেকে।
এফবিসিসিআই’র বর্তমান সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হন। সে হিসেবে এবার সভাপতি নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে।
সূত্র মতে, ২১ অথবা ২৩ মে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন বোর্ড। এ লক্ষ্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভায় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক দুই পরিচালক শামছুল আলম ও মনজুরুল হককে।
আর আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম আমীন উদ্দিনকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বোর্ডে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক দুই পরিচালক এ এস এম কামাল উদ্দিন এবং আলহাজ্ব মো. আইয়ুব। এছাড়া নির্বাচন বোর্ডের সচিব হিসেবে থাকবেন এফবিসিসিআই’র অতিরিক্ত সচিব আশরাফ আরেফিন।
তবে অধ্যাপক আলী আশরাফ নির্বাচন বোর্ডের এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম আমীন উদ্দিন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থাকবেন কিনা এটি এখন নিশ্চিত হয়নি। এখনো এ দু’জনের মতামত পায়নি এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এর ১৪ (১) ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করতে হয়। গঠিত নির্বাচন বোর্ড বাণিজ্য সংগঠন বিধিমাল ১৯৯৪ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের ৮০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করবে। সে অনুযায়ী নির্বাচন বোর্ড ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার বিধান রয়েছে।
সূত্রটি জানায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হলেও মে মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় আছে। কারণ বর্তমান বোর্ডের ক্ষমতাসীন একটি অংশ জুলাইয়ের আগে নির্বাচন না দেওয়ার পক্ষে। এই অংশটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে।
মে মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপিপন্থি এফবিসিসিআই’র এক পরিচালক বলেন, বোর্ডের ঘোষণা মুলত ব্যবসায়ীদের মন বোঝানোর জন্য। নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। কারণ সরকার এরইমধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এরপর রয়েছে রমজান মাস। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও রোজার মধ্যে এফবিসিসিআই’র নির্বাচন হওয়া সম্ভব না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫